৭ম-৮ম তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নথি— জানালেন দমকলকর্মীরা
আগুনের তাপে কালো হয়ে গেছে দেওয়াল, বিস্ফোরিত হয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার), ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে ভবনের কাচ— সচিবালয়ে বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা এভাবেই দিচ্ছিলেন দমকলকর্মীরা।
অগ্নিকাণ্ডের পর এই প্রতিবেদককে সচিবালয় পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে আগুন নেভানোর সঙ্গে জড়িত অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে, দমকলকর্মীরা সেদিনের অগ্নিকাণ্ডের ছবি দেখান এই প্রতিবেদককে। রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার পর ভবনের ভেতরে চরম উত্তাপ সৃষ্টি হয় বলে জানান তারা।
এক দমকলকর্মী বলেন, "অত্যধিক তাপে দেওয়াল থেকে সিমেন্টের পলেস্তারা খসে পড়ে যাচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্পে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠছে।"
তিনি বলেন, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের সপ্তম এবং অষ্টম তলার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা জানান, এই দুটি তলার অধিকাংশ অফিস ও কক্ষ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নথিপত্র, আসবাবপত্র তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই; তীব্র তাপের কারণে প্লাইউডের বোর্ডগুলো বেঁকে গেছে।
"দরজাগুলোয় তালা লাগানো ছিল এবং কক্ষে প্রবেশের কোনো উপায় ছিল না। ফলে সেখানে ঢুকে আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে," বলেন এক দমকলকর্মী।
তিনি আরও জানান, "প্রথমে, ভবনের মাঝামাঝি অংশে আগুন লাগে। তবে, দ্রুতই ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের চারটি পর্যায় থাকে— ইগনিশন বা আগুনের সূত্রপাত, বৃদ্ধি, সম্পূর্ণ বিকাশ এবং নির্বাপণ। আমরা যখন পৌঁছলাম তখন আগুন ইতোমধ্যেই তৃতীয় বা বিকাশ পর্যায়ে ছিল এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিকাশ পর্যায়ে পৌঁছায়।"
"এটা তো কোনো রাসায়নিক কারখানা নয়, তারপরেও তীব্র তাপে ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলো বিস্ফোরিত হয়ে গিয়েছিল। আগুনের গ্র্যাভিটি ছিল অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত। ভবনের পশ্চিমে আমরা বারবার কাচ বিস্ফোরিত হতে দেখেছি," যোগ করেন তিনি।
এদিকে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, শুধু এতটুকুই জানিয়েছেন তারা।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার বলেছেন, "আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সতর্কতার সাথে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। তদন্তকারী সংস্থা তাদের ফলাফল প্রকাশ না করা পর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারছি না।"
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনার কারণ উদঘাটনে ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু করেছে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ঘিরে রাখা ৭ নম্বর ভবনে অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন তারা। তদন্ত কমিটির পাশপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও অনুসন্ধান করছেন।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, "সচিবালয়ে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের ঊচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকেও মূল প্রবেশপথের বাইরে গাড়ি রেখে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।"
"কী কারণে আগুন লেগেছে— তা যাচাইয়ে সিআইডি, র্যাব, পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলও রয়েছে," যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।