সড়কের জন্য অধিগ্রহণের খবর শুনে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক
এশিয়ান হাইওয়ে ১-এর অংশ ও ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-বাইপাস (দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর) মহাসড়কের উভয় পাশে ৩০ ফুট প্রস্থের সার্ভিস লাইন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের খবর পেয়ে সড়কের পাশে অবৈধ ও অননুমোদিত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।
এটি বন্ধ করতে ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকা ও সেগুলো অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধপত্র দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না কেউ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাপোর্ট টু জয়দেবপুর দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) পিপিপি প্রকল্পের অধীনে সড়কের উভয় পাশে ৩০ ফুট সার্ভিস লেন নির্মাণের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলার উলুখোলা, সেনপাড়া, কুচিলাবাড়ী, রাথুরা ও গলান মৌজায় মোট ২ দশমিক ৫৫৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য গত ৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠি দেওয়ার পর থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত এলাকা থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য অনেকেই অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য কোন নকশা অনুমোদন বা কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি।
এসব বিষয় নজরে এলে ইতোমধ্যে সওজের প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণকারী বিভিন্ন ব্যক্তিকে চিঠি দিয়ে নির্মাণ থেকে বিরত থাকার জন্য এবং নির্মিত এসব স্থাপনা অপসারণের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানায় একাধিক চিঠি দিয়েছেন।
কিন্তু কেউ কোনো কিছু মানছেন না। ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় সরকারের বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত খরচ করতে হতে পারে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সওজের প্রকল্প পরিচালকের ইস্যু করা চিঠি থেকে জানা যায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিতে "জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) ৪-লেনে উন্নীতকরণ" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ২-লেনবিশিষ্ট জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) সড়কটি উভয় দিকে সার্ভিস লেনসহ ৪-লেন এক্সেস কন্ট্রোল সড়কে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে।
মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সহায়ক প্রকল্প হিসেবে "সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) পিপিপি প্রকল্প (১ম সংশোধিত)" শীর্ষক প্রকল্পটির আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি শিফটিং এবং পুনর্বাসনের কাজ চলমান রয়েছে।
আরো জানা যায়, সড়কটির প্রথম ২২ কিলোমিটার অংশটি গাজীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত। এই অংশে কালীগঞ্জ উপজেলায় চেইনেজ কিলোমিটার ১৮+১৮৩ হতে কিলোমিটার ১৮+৪৭৮ অংশ উলুখোলা ও সেনপাড়া, চেইনেজ কিলোমিটার ১৮+৮০৪ হতে কিলোমিটার ১৯+০৮৫ অংশ কুচিলাবাড়ী, চেইনেজ কিলোমিটার ২০-৯০০ হতে কিলোমিটার ২১+০২০ অংশ রাথুরা ও গলান মৌজায় সড়কটির উন্নয়নের জন্য সর্বমোট ২.৫৫৬২ একর স্থায়ী ভূমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে।
চিঠিতে আরো বলা হয়ে, সম্প্রতি সড়ক পরিদর্শনকালে দেখা যায় যে, ভবন নির্মাণের জন্য সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার নকশা অনুমোদন ব্যতীত এবং সড়কের প্রান্ত হতে যথাযথ দূরত্ব বজায় না রেখে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে। এর ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হওয়ার ও প্রকল্প খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে উল্লিখিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-বাইপাস সড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার গরান এলাকায় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না৷ দ্রুত সময়ে ভবন নির্মাণের জন্য নিম্নমানের ইট, খোয়া ব্যবহার হচ্ছে।
স্থানীয় চায়ের দোকানদার নাজমুল ইসলাম বলেন, "আমি ১৫ বছর ধরে এখানে চায়ের দোকান করি। এটি এতদিন ইটের দেয়ালের উপরে টিনের ছাপরা ছিল। এখন এর উপরে ছাদ ঢালাই করা হচ্ছে। আশপাশের সবাই করছে, তাই আমার দোকানের মালিকও করছে কিন্তু কেনো করছে জানি না।"
চায়ের দোকানের কাস্টমার গলান এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, "অধিগ্রহণ হবে এমন খবরে সবাই ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। গত ১৫-২০ দিন ধরে তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ডিসি অফিসে কিছু দালাল রয়েছে, তারা অধিগ্রহণের খবর এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। এরপরেই তারা দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করেছে।"
এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ বলেন, "ঢাকার যানজট এড়িয়ে পণ্য ও যানবাহনের চলাচলের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নিরাপদে স্থানীয় পরিবহণের জন্য সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। আমরা প্রস্তাব দেওয়ার পর কিছু অসাধু লোক বেশী ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য রাতারাতি অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে।"