‘কারো কারোর এমপি হওয়ার জন্য ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে’
সংসদ সদস্য হওয়ার আগের খরচ তুলতে গিয়ে- তাদের (এমপি) একটি বড় অংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেছেন, আগের সরকারের সময়ে কারোর কারোর এমপি হওয়ার জন্য ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে।
আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) 'শ্বেতপত্র এবং অতঃপর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট' শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় পর্বে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের চীন মৈত্রী সম্মেলনে এই সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এতে সহযোগিতা করেছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক কমিটি।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, 'রাজনীতিবিদদের মধ্যে করাপশন (দুর্নীতি) আছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। টাকার প্রতি লোভের কারণেও করাপশন হতে পারে। আবার করাপশন ব্যালটেও শুরু হয়। এমপি হতে কত টাকা লাগে? ৫০ লাখ, ১ কোটি, ৫ কোটি, ১০ কোটি, ১০০ কোটি, ২০০ কোটি, ৩০০ কোটি !! ৩০০ কোটি টাকাও লাগে। ৫ কোটি টাকার নিচে এমপি হয়েছে, এমন এমপি ৫ থেকে ১০ জন আছে। ১০ কোটি থেকে ৫০ কোটি খরচ করে এমপি হয়েছে— এমন এমপি ৫০ থেকে ৬০ জন। আর ২০/৩০ জন আরও বেশি, দেড়শ- দুইশো কোটি খরচ করেছেন অনেকেই। তারা যে টাকাটা খরচ করছে তাদের আগ্রহ কী? কেনো? ডেফিনেটলি সেখানে একটা দুর্নীতির দুষ্টচক্রে সবাই পড়ে যায়।'
তিনি বলেন, 'শূন্য টাকায় এমপি হওয়ার সুযোগ করে দেন, দেখবেন তরুণ প্রজণ্মের যারা আসছেন— তারা সৎ এমপি হবেন। এমপিদের এমপি হওয়ার সময়ই যদি ডোনেশন নিতে হয়, পার্টি ফান্ডে টাকা দিতে হয়, বালি ব্যবসায়ীদের থেকে ডোনেশন নিতে হয়, সেতো এমপি হওয়ার পরে বালি ব্যবসায়ীকে সাপোর্ট করবে। (দেশের রাজনীতিকে) এই চক্র থেকে বের করেন।'
এমপিরা দেশের বাজেটের সামান্য অংশ বাস্তবায়ন করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাইম মিনিস্টার বাজেটের ৯৯ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন করেন। আর ১% এর কম করেন এমপিরা। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মিলে বাজেটের ৫ হাজার কোটি টাকার হ্যান্ডেল করেন।
আলোচনায় অন্যান্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে এখন অবশ্যই অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যষ্ফীতি প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। এরজন্য বর্তমান সরকার দায়ী না, কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপও নিতে পারছে না। কাজ নেই, কাজ সৃষ্টির সুযোগও নেই। এরমধ্যে টিসিবির কার্ড কমিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু যে মানুষগুলোকে কার্ড থেকে বের করে দেওয়া হলো— তাদের কি আয় বেড়েছে ? তাদের আয় বাড়েনি, আবার টিসিবি থেকে বাদ গেল। এরফলে বিশাল সর্বহারার গোষ্ঠী তৈরি হবে। সর্বহারা স্বৈরতন্ত্র আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কোনো সন্দেহ নেই।'
তিনি বলেন, আগের সরকারের আগ্রহ ছিল— চৌর্যবৃত্তির সুযোগ সম্বলিত উন্নয়ন প্রকল্পে। মানুষের উন্নয়নে সরকার আগ্রহ দেখায়নি। যেকারণে উন্নয়ন টেকসই হয়নি।
পাচার টাকা ফেরত আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এজন্য কমিশন করা দরকার। কি করে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনা যায়— সেটা দেখতে হবে। অনেক ইন্টারনাল মেকানিজম আছে। টাকা ফেরত আনলে— শাস্তি কম হবে এটা কমন মেথড।'
তিনি বলেন, এই মুহুর্তে রাজনীতি দরকার। প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সমাধান দরকার। রাজনৈতিক ঐক্যও দরকার। অরাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্যও রাজনৈতিক ঐক্য দরকার।