আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি মেডিকেল ডিভাইস ব্যবসায়ীদের
'ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩'-এর আওতামুক্ত করে মেডিকেল ডিভাইসের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে মেডিকেল ডিভাইস ব্যবসায়ী সমিতির সম্মিলিত জোট। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
ডায়াগনস্টিক রিয়েজেন্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হাসপাতাল ইকুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বিএমএ ভবন শপ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন—এই চারটি সংগঠনের নেতারা যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের প্রচলিত আইন ড্রাগস অ্যাক্ট, ১৯৪০ এবং ড্রাগস কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ অনুযায়ী মানবদেহের বাহিরে ব্যবহৃত মেডিকেল ডিভাইস ও ডায়াগনস্টিক রিয়েজেন্টকে ওষুধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তাই এই পণ্যগুলো আমদানির জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে কোনো লাইসেন্স বা নিবন্ধনের প্রয়োজন ছিল না।
কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রণীত 'ঔষধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩'-এর আওতায় মানবদেহের বাহিরে ব্যবহৃত সব মেডিকেল ডিভাইস ও ডায়াগনস্টিক রিয়েজেন্টকে ওষুধের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার পূর্বেকার আইন রহিত করে 'ঔষধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩' প্রণয়ন করেছে। বর্তমান আইনে মানবদেহের বাইরে ব্যবহৃত সকল প্রকারের মেডিক্যাল ডিভাইস ও ডায়গনস্টিক রিয়েজেন্ট ধারা ২ (৫) অনুযায়ী 'ঔষধ' এর সংজ্ঞা ও আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ঔষধ প্রস্তুত করার জন্য রেসিপি অনুমোদনের আবেদন করতে হয় এবং রেসিপি অনুমোদন সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে হয়। ঔষধের প্রস্তুতির জন্য এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু মেডিকেল ডিভাইসের ৯৮ শতাংশ পণ্য সামগ্রীই আমদানি নির্ভর। আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের জন্য রেসিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বক্তারা বলেন, আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইস ইউএস-এফডিএ/সিই/আইএসও সার্টিফাইড হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ফ্রি স্কেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। এই সার্টিফিকেট আবার বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত করার প্রয়োজন হয়, যা সময় সাপেক্ষ ও অযৌক্তিক।
প্রোডাক্ট রেজিস্ট্রেশন করার পরও প্রতিবার এলসি করার আগে ঔষধ অধিদপ্তর হতে ইনডেন্ট অ্যাপ্রুভাল প্রসেস সম্পন্ন করে তারপর আমদানি করতে হয়। যার কারণে স্বাভাবিক আমদানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রন্থ ও বিলম্বিত হয়, বলেন তারা।
দেশের জনগণের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সকল প্রকারের মেডিক্যাল ডিভাইস, যন্ত্রপাতি ও ডায়গনস্টিক রিয়েজেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে নিবন্ধনের জন্য স্বতন্ত্র আইন ও যুগোপযোগী বিধিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন নেতারা।
তারা বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে আমাদের মেডিকেল ডিভাইস বা পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য, ব্যবহারকারী ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সদস্য, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞজনদের নিয়ে মেডিকেল ডিভাইস এক্সপার্ট কমিটি গঠন করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়াও তাদের আরও দুই দাবি—মেডিকেল ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞজনদের সম্পৃক্ত করে পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে এবং সেই সাথে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে রেসিপি অনুমোদন, ইনডেন্ট অ্যাপ্রুভাল প্রসেস এবং ফ্রি-সেল সার্টিফিকেট (এফএসসি) আমাদের দূতাবাসে সত্যায়িত করার প্রক্রিয়াসমূহ বাতিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পার্শ্ববর্তী দেশের উদাহরণ তুলে ধরে নেতারা বলেন, ভারতে ক্লাস 'এ' ও 'বি' মেডিকেল ডিভাইসের রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ১০ মার্কিন ডলার। অথচ বাংলাদেশে প্রতিটি পণ্যের জন্য ৬৫ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। তারা প্রস্তাব করেন, ক্লাস 'এ' পণ্যের রেজিস্ট্রেশন ফি ১ হাজার টাকা, ক্লাস 'বি' ৫ হাজার টাকা, ক্লাস 'সি' ১০ হাজার টাকা এবং ক্লাস 'ডি' ১৫ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হোক।