ধামরাইয়ে শরিয়াবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে ভাঙা হলো মাজার
ঢাকার ধামরাইয়ে একটি মাজারে ওরশ চলাকালে 'শরিয়াবিরোধী কর্মকাণ্ডের' জন্য প্রথমে ওরশ কার্যক্রম বন্ধ ও পরে মাজারটি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল মুসল্লির বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামের শুকুর আলী শাহ ফকিরের মাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মাজারের ভেতরে থাকা দুটি কবর ও বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভাঙচুর করা হয়। আরেকটি ঘরের বেড়ার টিনও ভাঙা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৭-৮ শত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ধামরাই থানায় একটি মামলা করেছে।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, 'ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।'
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতাকর্মীসহ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল মাজারে মাদকসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়। আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে মসজিদে জড়ো হয়েছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গান-বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর বা হামলা নয়।'
'[ওরশ আয়োজকেরা] পুলিশকে ওরশ বন্ধ করার কথা জানালে আমরা এশার নামাজ শেষে ফিরে যাই। পরে শুনেছি, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার এবং যে কক্ষে অনৈতিক কর্মকাণ্ড হতো সেটি ভেঙে দিয়েছেন। তবে এটি আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না,' তিনি আরও বলেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার মাজারে বার্ষিক ওরশের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ ও তবারক বিতরণের পর রাতে বাউল গানের আয়োজন করার কথা ছিল। তবে বিকেল থেকেই ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতৃত্বে একদল মুসল্লি মাজারের কাছে একটি মসজিদে জড়ো হয়ে গান-বাজনা বন্ধের দাবি জানান।
রাত ৮টার দিকে পুলিশ এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় আয়োজকদের ওরশ বন্ধ করার অনুরোধ করলে তারা তা মেনে নেন।
এ সময় মুসল্লিদের পক্ষ থেকে ওরশের আয়োজকদের আটক ও মুচলেকা নেওয়ার দাবি জানানো হলে পুলিশ তাতে সায় না দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এরপর রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ জন মুসল্লি মাজারে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তারা মাজারের পাশাপাশি দুটি কবর এবং বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভাঙচুর ও আরেকটি ঘরের বেড়ার টিন ভেঙে ফেলে।
প্রয়াত শুকুর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, 'মাজারে মোমবাতি আর আগরবাতি জ্বালাইতাম। বহুবছর ধইরা ওরশ হয়।'
তিনি বলেন, গতকাল মুসল্লিরা নিষেধ করছিল ওরশ করতে, তাই তারা ওরশ বন্ধ করেছিলেন। 'এরপর রাইতে ৫০-৬০ লোক আইসা মাজার, ঘর ভাইঙা দিছে। ভয়ে পোলারা বউ পোলাপান নিয়া চইলা গেছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী টিবিএসকে বলেন, বিকেলে বহিরাগত শতাধিক মুসল্লি মসজিদে জড়ো হয়ে মাজারে গান-বাজনা বন্ধের দাবি জানায়। রাত ১০টার দিকে তাদের একাংশ গিয়ে মাজার ভেঙে দেন।
এ সময় তারা মসজিদের মাইকে ওই মাজারে 'সেজদা দেওয়া, মানত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না' বলেও স্লোগান দেন।