প্রকল্প স্থগিত ও বাতিলের কারণে নির্মাণ খাতে মন্দা, বলছেন ব্যবসায়ীরা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/25/construction_worker_1.jpg)
দেশের নির্মাণ খাত সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মন্দার মধ্যে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে অনেক সরকারি প্রকল্প স্থগিত হয়েছে, কিছু বাতিল হয়েছে, আর নতুন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করতে দেরি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, বেসরকারি খাতের নির্মাণ প্রকল্পও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
তবে তাদের বিশ্বাস, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে আবারও নতুন বিনিয়োগ শুরু হবে।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চলমান "বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন, উডওয়ার্কিং অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল এক্সপো"-তে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ মন্তব্য এসেছে।
তিন দিনের এ প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন স্টল ঘুরে সেক্টরের মন্দা পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আগের বছরের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। স্টলের সংখ্যাও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে ফুজিয়ান কুনফেং মেশিনারি কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে অনেক প্রকল্প স্থগিত হয়েছে। তাছাড়া, নতুন প্রকল্প শুরু হচ্ছে না। এটি আমাদের ব্যবসা ধীর করে দিয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "নির্মাণ খাত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মহামারি, ডলারের সংকট এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন।"
আমিনুল জানান, চীনা কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রায় ৬০টি কারখানা পরিচালনা করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, "আমাদের কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। এখানে পরিবেশগত কারণে প্রচলিত ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লকের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমরা মেগা প্রকল্পে অবদান রেখেছি এবং পদ্মা সেতুর নদীশাসন কার্যক্রমের মতো প্রকল্পেও কাজ করেছি।"
আয়োজকদের মতে, এ বছরের প্রদর্শনীতে প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, তাইওয়ান, জার্মানি এবং তুরস্কের প্রতিষ্ঠান।
তবে গত বছর প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক ছিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। এ বছর মাত্র ৪ থেকে ৫টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান যোগ দিয়েছে। স্টলের সংখ্যাও কমে গেছে। গত বছর প্রায় ২৫০টি স্টল ছিল। কিন্তু এ বছর তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ক্যাথওয়েল্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. ইয়াকুব আলী বলেন, "অনেক সরকারি প্রকল্প স্থগিত হয়েছে এবং কিছু বেসরকারি গ্রাহক সরকার পরিবর্তনের পর নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "কিছু ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে, টেন্ডার জমা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রকল্প বাতিল হয়েছে। এতে আমাদের জামানতের টাকা আটকে গেছে।"
চীনা প্রতিষ্ঠান জিনডা মেশিনারি লিমিটেডের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কনস্ট্রাকশন সল্যুশন নির্মাণ খাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব তুলে ধরেছে।
কনস্ট্রাকশন সল্যুশনের সিওও মোস্তফা কামাল বলেন, "রাজনৈতিক সংকটের কারণে মানুষ প্রকল্পে বিনিয়োগ কম করছে, আর সরকারি প্রকল্পগুলোও স্থবির হয়ে আছে। সাধারণত শুক্রবারে বড় ভিড় হয়। কিন্তু এবার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম।"
তিনি আরও বলেন, "পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আবার বাড়বে। তবে এখনো একটি অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।"
ভারতের প্রতিষ্ঠান শুইং স্টেটারের সিনিয়র সেলস অফিসার আবদুস সালাম বলেন, "আমরা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পে কাজ করেছি। বর্তমানে নতুন প্রকল্প না থাকায় বিক্রি কমেছে। তবে প্রকল্পগুলো শুরু হলে বিক্রি আবার বাড়বে।"
প্রদর্শনীতে কনস্ট্রাকশন সল্যুশন, যন্ত্রপাতি নির্মাতা এবং বৈদ্যুতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছে।
এই খাতের শিল্পপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কিছুটা স্থবির থাকতে পারে এ খাত।