ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের আগ্রহকে স্বাগত জানালেন তারেক রহমান
দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র ও রাজনীতি ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, যাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইসঙ্গে, তাঁরা রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিলে বিএনপি স্বাগত জানাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে এই প্রক্রিয়ায় প্রশাসন বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার যেন নাহয়— সেটিও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন।
আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে 'জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে' এক শিক্ষক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র ও রাজনীতি ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এসব তরুণরা গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেননি। গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত এসব তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে।
"তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে। অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্যে ও মন্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয় সেটিও জনগণের কাছে হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।"
তিনি বলেন, অবশ্যই আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তারুণ্য নতুন পথ রচনা করবে। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়। পথটি অবশ্যই হওয়া উচিত, স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক।
বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, এবং অযথা কটূ তর্ক আমি সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একইসঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মানতে পারে, মেনে নিতে পারে, তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন— তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি।
অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে দুই-একটি মৌলিক বিষয় ছাড়া তেমন কোনো ভিন্নমত বা বিরোধ নেই।
তিনি আরো বলেন, আমি আগেও বলেছি, বিএনপি নির্বাচন ও সংস্কার- দুইটির পক্ষে। দুটিই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন। কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখি তাহলে কিন্তু সেটি ভিন্ন। দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে, এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সংসার পরিচালনা করা। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।
তারেক রহমান বলেন, "রাজনীতিটা আমাদের শুদ্ধ করা প্রয়োজন। রাজনীতিটা শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ করা জরুরি। প্রচলিত রাজনীতির গুণগত যে পরিবর্তন, সেটি যদি না করতে পারি— তাহলে কিন্তু এখানে যতগুলো আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে, কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এই লক্ষ্যেকেই সামনে রেখে বিএনপি'র রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল সংস্কারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পক্ষের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের সামনে ৩১ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেছে। জনগণের রায় পেয়ে সরকার গঠনে সক্ষম হলে বিএনপি পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র এবং রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করি না কেন, চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। জীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষকরাই কিন্তু আদর্শের রোলমডেল। কিন্তু শিক্ষকরাই যদি রাষ্ট্র এবং সমাজে সম্মান ও সংসার নিয়ে টানাপড়েনে থাকেন তাহলে একজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে রোলমডেল হিসেবে কি নিজেকে উপস্থাপন করা সম্ভব? অবশ্যই নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীর সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে একজন রোলমডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন, সে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে রাষ্ট্র এবং সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
জনগণের সমর্থনে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ পেলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষা কমিশন করা হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, নৈতিকতা ও সামাজিক ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে জীবননির্ভর কর্মসূচি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন এবং শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে পুনর্মূল্যায়ন করে রাষ্ট্রীয় এবং সমাজে শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার আমাদের অবশ্যই চেষ্টা থাকবে।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমাবেশে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।