আন্তঃনদীর পানি বণ্টনে প্রমাণ-ভিত্তিক আলোচনা প্রয়োজন: বিশেষজ্ঞরা
বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃনদীর পানি বণ্টনে 'এভিডেন্স-বেজড নেগোসিয়েশন' বা প্রমাণ-ভিত্তিক আলোচনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
আর এর জন্য নদীগুলোর কার্যকরী ও তথ্যবহুল ডকুমেন্টশন প্রয়োজন। যদিও এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
দশম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবারে (২৭ জানুয়ারি) পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অ্যাকশন এইড-এর আয়োজনে 'পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ' শীর্ষক সম্মেলনে এসব কথা বলেন ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে আগত বিশেষজ্ঞরা।
আলোচনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক জয়ন্ত বসু বলেন, "বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমান-সমান বণ্টন নীতি হওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে প্রমাণ-ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের সম্পর্ক ঠিক করতে পারে। তিস্তা নদী নিয়ে আন্তঃসীমানা এবং 'ট্রান্স বাউন্ডারি ডিসকোর্স' অনুসরণ করা যেতে পারে। এজন্য এভিডেন্স-বেজড নেগোসিয়েশন দরকার।"
তিনি বলেন, "পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে আমরা সঠিক তথ্যের প্রাসঙ্গিকতা মিস করে যাচ্ছি। বিশেষ করে, তিস্তার পানি পরিমাপের সময় সিকিম ও পশ্চিম বঙ্গের পানি প্রবাহের মাত্রার ভিন্নতা থাকায় সঠিক তথ্য পাচ্ছেনা কোনো পক্ষ। এতে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পানি বণ্টনের আলোচনাও ফলপ্রসূ হচ্ছেনা।"
তিনি আরও বলেন, "আন্তঃনদীগুলোর তথ্যবহুল ডকুমেন্টশন প্রয়োজন। যেটা হয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত নেই। এজন্য আবারও উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।"
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ন্যায্য হিস্যার প্রসঙ্গে জয়ন্ত বসু বলেন, "এক্ষেত্রে প্রয়োজনে 'ফিফটি-ফিফটি' বা 'সিক্সটি-ফরটি' হতে পারে। সেটি দু'দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হতে পারে।"
পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ বলেন, "নদী এবং পানি ঠিক রাখতে তরুণদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা, আরও বেশি পড়াশোনা এবং গবেষণায় জোর দিয়ে সরকার কাজ করছে। আমরা আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছি।"
"জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ইতোমধ্যে আমাদের এসডিজিতে রয়েছে। এখন পানির বিষয়টি এসেছে, আমরা এটিও সংযুক্ত করবো। প্রয়োজনে পাঠ্যসূচিতেও তা যুক্ত করতে আমরা কাজ করবো," যোগ করেন তিনি।
সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, "দুই দিনের আলোচনায় আমরা পানি এবং নদী বিষয়ে অনেক সুন্দর আলোচনা এবং প্রস্তাবনা পেয়েছি। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করবো এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তা তুলে ধরবো।"
তিনি বলেন, "এবারের সম্মেলনে আমরা 'হাইড্রো ডিপ্লোমেসি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ'কে প্রাধান্য দিয়েছি। এ নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে, আমরা সেগুলো আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচনায় তুলতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করবো।"
পানির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিতের দাবিসহ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবারে আলোচ্যসূচিতে ছিল 'পানি বিষয়ক শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ', 'সহযোগিতার ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষা এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ' এর মতো বিষয়গুলো।
আলোচনায় দেশের নদী-উপনদীগুলোর নানান সংকট এবং এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে। আলোচনায় প্রয়োজনে ভারতের পাশাপাশি চীন এবং নেপালকেও সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, "দেশের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর নাব্যতা এবং প্রবাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনে নদীর উৎস দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানে কাজ করা যেতে পারে।"
দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনের সেশনগুলোতে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে টেকসই, জলবায়ু সহনশীল, বিশুদ্ধ পানির উৎস এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং পানি পরিশোধন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের উৎসাহ দেওয়া হয়।