কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুলের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেছেন স্ত্রী
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/31/comilla_jobodal_death_0.jpg)
কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর আটকের পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে ইয়াসমিন নাহার ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়া অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। বুধবার সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন সদর উপজেলার পান্ডানগর এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম, ইটাল্লা এলাকার তানজিল উদ্দিন, নাজমুল হাসান টিটু, খায়রুল হাসান মাহফুজ, সাইদুল ইসলাম সবুজ ও বামইল এলাকার সোহেল।
মামলায় ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে আসামিদের যোগসাজশে তৌহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের জিওসি (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।
৩১ জানুয়ারি শুক্রবার কুমিল্লার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রাম থেকে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে তৌহিদুল ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার পরিবার।
নিহতের ভাই আবুল কামাল বলেন, শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে তিনটি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি তাদের বাড়িতে আসে। তারা তৌহিদুলের কাছে অস্ত্র থাকার অভিযোগ তুলে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না এবং তিনি কখনও অস্ত্র বহন করেননি বলে দাবি করেন তার ভাই।
পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ পরিবারকে জানায়, গোমতী নদীর তীরে গোমতী বিলাস নামক স্থানের কাছে তৌহিদুলকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পুলিশ তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জানান, পুলিশ সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। ইসিজি করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, তৌহিদুলের শরীরজুড়ে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, ঘটনাটি 'অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক'।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি, মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জরুরি তদন্তের নির্দেশ দেয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেকোনো ধরনের হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি যুবদল নেতার মৃত্যুর বিষয়ে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অপরাধ বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নিহতের ভাই কালাম জানান, তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে শিপিং এজেন্টের কর্মচারী ছিলেন। কিছুদিন আগেই তিনি বাবার কুলখানিতে যোগ দিতে বাড়িতে এসেছিলেন। তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে।