খেলাপি ঋণের দায়: ক্লিফটন গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের বাসভবন ক্রোকের আদেশ
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/12/20/court.jpeg)
খেলাপি ঋণের দায়ে রপ্তানি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ক্লিফটন গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবন ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ৬৯ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে বেসিক ব্যাংকের দায়ের করা মামলায়— চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ৬৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের দাবিতে ২০১৮ সালে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে বেসিক ব্যাংক জুবলি রোড শাখা। মামলায় এম আর এফ ট্রেড হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান মো. এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী, পরিচালক কানিজ ফারজানা রাশেদ ও মুরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে বিবাদী করা হয়েছে।
আদালত ও পাওনাদার ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১০ বেসিক ব্যাংক জুবলি রোড থেকে পণ্য আমদানির নামে ঋণ সুবিধা নেয় এম আর এফ ট্রেড হাউজ লিমিটেড। এলএটিআর সুবিধায় নেয়া এই ঋণ শোধ করেনি ২০১৮ সাল পর্য়ন্ত। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ঋণের টাকা আদায়ে খেলাপি মামলা দায়ের করে ব্যাংক। ঋণের বিপরীতে মো. এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীর ৯৮ শতক জমিসহ একটি বাড়ি বন্ধক রয়েছে। মামলা দায়েরের ৮ বছরের মধ্যেও ঋণের টাকা শোধ না করায়— বিবাদীর বাড়ি ক্রোকের এই নির্দেশ দেন আদালত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ঋণটির সুবিধাভোগী মূলত ক্রিস্টাল গ্রুপের কর্ণধার এবং এম আর এফ ট্রেড হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মুরাদ ইব্রাহিম। যিনি ক্লিফটন গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীর জামাতা। মূলত জামাতাকে ব্যাংক ঋণ সুবিধা পাইয়ে দিতে এম আর এফ ট্রেড হাউজের চেয়ারম্যান হন কামাল উদ্দিন। জামাতা ঋণ শোধ না করায় বিপাকে পড়েছেন ক্লিফটন গ্রুপের এই কর্ণধার।
এই বিষয়ে জানতে ক্লিফটন গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক ও ফিশিংসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করে আসা ক্রিস্টাল গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এই ঋণ শোধ না করে গ্রুপটির কর্ণধার মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের স্ত্রী মাহজাবীন মোরশেদ লন্ডনে, রাশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের স্ত্রী কানিজ ফারজানা কানাডায় এবং ফয়সাল মুরাদ ইব্রাহিম তাঁর স্ত্রী হুমাইরা করিম তুরস্কে পাড়ি দিয়েছেন— এমন তথ্য রয়েছে ব্যাংক ও আদালতের কাছে।
তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতের।
ক্রিস্টাল গ্রুপের মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান। পদ্মা ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন— মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার পরিবারের সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সহজে এই ঋণ সুবিধা নেয় পরিবারটি। কিন্তু, ঋণের এই টাকা ব্যবসায় না খাটিয়ে সিংহভাগই ভোগ-বিলাসে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০৯ সালে মোর্শেদ মুরাদের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মনোনিত হন।