শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার ড. ইউনূসের
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/14/ca-yunus.jpg)
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শাস্তি থেকে রেহাই পেতে দেবেন না তিনি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করা হবে এবং তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, যাতে তারা আইন অনুযায়ী পূর্ণ শাস্তি পান।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'দ্য ন্যাশনাল'-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এরপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত জুলাই ও আগস্টে শেখ হাসিনার প্রশাসন ও তার সমর্থকদের হাতে আনুমানিক ১,৪০০ মানুষ নিহত হন এবং প্রায় ১১ হাজার মানুষ আহত হন। এরপর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস দ্য ন্যাশনালকে বলেন, 'শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনসহ তার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই প্রতিবেদন তাদের কর্মকাণ্ডের একটি দলিল। জাতিসংঘ এই বিষয়টি নথিভুক্ত করেছে এবং শেখ হাসিনা এবং তার সরকার ও তার ঘনিষ্ঠ সমর্থকরা দেশের মানুষের সঙ্গে যা করেছে, আমাদের কাছে তার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা আশা করছি আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং আমরা তাকে বিচারের আওতায় আনব। এটা করতেই হবে, তা না হলে দেশের মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না।'
অভ্যুত্থানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শিশু ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানে ৪৪ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন।
অভ্যুত্থানের প্রভাব শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৫৩ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে মুহাম্মদ ইউনুসের অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ তাদের মুক্তি দেন।
ড. ইউনূস বলেন, এটি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বৃহত্তর অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের সূচনা।
তিনি বলেন, 'সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। আমার অনুরোধে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ায় আমি খুব খুশি। আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো, কারণ আমিরাতে ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। এটা আমাদের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
শক্তিশালী, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্বের অধীনে আরও সমৃদ্ধ, নিরাপদ জাতি পুনর্গঠনের জন্য বর্তমানে মুহাম্মদ ইউনুস ও তার উপদেষ্টারা দেশের সংস্কার কার্যক্রমের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ ও প্রশাসনের সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন আগের সরকারের লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রীয় তহবিল উদ্ধারে কাজ করবে।
ইউনুস বলেন, 'সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো একটি নিরাপদ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করা, যা জনগণের মালিকানা, কল্যাণ ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষের হাতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাখা।'
তিনি বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা, অর্থনীতিকে সচল করা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার সংস্কার করা। আমরা এই সুপারিশগুলো নিয়ে সব রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটির কাছে যাব, তাদের কাছে জানতে চাইব, কোনগুলো এখন বাস্তবায়ন করতে চান, কোনগুলো ভবিষ্যতে করতে চান এবং কোনগুলো একেবারেই করতে চান না।'
তিনি আরও বলেন, 'এটাই আমাদের সরকারের কাজ। আমরা ১৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারলে খুশি হব-এমন নির্বাচন; যা হবে নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ। তাহলেই মানুষও খুশি হবে এবং আমাদের কাজও শেষ হবে।'
দুবাইয়ে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইউনূস জানান, তার কাজ শেষে তিনি আনন্দের সঙ্গে পদ ছাড়তে রাজি আছেন।
তিনি বলেন, 'এখন আমাদের একটি ঐকমত্য গঠন কমিশন রয়েছে, তারা সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশগুলো শুনবে। এরপর সেগুলোর আলোকে তারা একটি খসড়া তৈরি করবে, যার ভিত্তিতে এই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগিয়ে যাব। আমার কাজ শেষে আমি নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দেব।'