বৈঠকে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে গেলেন ট্রাম্প ও মোদি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/14/modi_trump.jpg)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন। সেখানে অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও জনসমক্ষে তারা মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরে ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনে দ্বিদলীয় উদ্বেগ কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং চীন মোকাবিলায় অংশীদার হিসেবে নয়াদিল্লির গুরুত্ব বাড়ার ফলে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
হোয়াইট হাউজে বৈঠকের সময় এবং পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিলেও, মানবাধিকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
ইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, 'ভারতে মানবাধিকার বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা কম। এর মূল কারণ হলো, তার পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণ স্বার্থকেন্দ্রিক, যেখানে মানবাধিকারসহ মূল্যবোধভিত্তিক বিষয়গুলোর জন্য খুব একটা জায়গা থাকে না।'
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ভারতের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তবে তার শীর্ষ কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মাঝে মাঝে সংখ্যালঘু নিপীড়নের নিন্দা করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ভারতে নিপীড়নের উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নয়াদিল্লি এসব প্রতিবেদনকে 'গভীরভাবে পক্ষপাতদুষ্ট' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
একই রকম ব্যক্তিত্ব
চ্যাটাম হাউস থিংক ট্যাংকের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো চিতিজ বাজপাই মোদি ও ট্রাম্পকে 'শক্তিশালী নেতা' হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, তাদের ধারণাগুলো অনেকটা একরকম।
কুগেলম্যান বলেন, মানবাধিকার নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিসহ অন্যান্য সাদৃশ্যগুলো তাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো অনেক দিন ধরে ট্রাম্প ও মোদির রেকর্ডের সমালোচনা করে এসেছে।
ট্রাম্প জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বন্ধ করে দিয়েছেন এবং গাজা নিয়ে তার পরিকল্পনাকে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা জাতিগত নিধন অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়াও, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলো বাতিল করেছেন। এসব প্রোগ্রাম প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোকে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে চালু ছিল।
ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ডিইআই-কে (বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি) বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মোদির সরকারের সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের সমালোচনা করেছে। তারা ঘৃণামূলক বক্তব্য বৃদ্ধি, ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইন [জাতিসংঘ এটিকে 'মূলত বৈষম্যমূলক' বলে অভিহিত করেছে], বিশ্বাসের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জ করা অ্যান্টি-কনভার্শন আইন এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা অপসারণের দিকে ইঙ্গিত করেছে।
মোদী বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেন, তার নীতিগুলো, যেমন খাদ্য সহায়তা স্কিম এবং বৈদ্যুতিকীকরণ প্রচেষ্টা সকলের জন্য উপকারী।
বৃহস্পতিবার আলোচনার অন্যতম একটি বিষয় ছিল অভিবাসন। ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং ভারত দক্ষ পেশাদারদের জন্য মার্কিন ভিসাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ভারতীয়রা এইচ-১বি ভিসার বৃহত্তম অংশীদার, যা ট্রাম্প সমর্থন করেন।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে মোদি মানব পাচার বন্ধে আলোচনা প্রস্তাব দেন। এটিকে তিনি অবৈধ অভিবাসনের কারণ হিসেবে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারত যে কোনো যাচাইকৃত ভারতীয়কে গ্রহণ করতে [যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছে] 'সম্পূর্ণ প্রস্তুত'।
এদিকে, ২০২৩ সাল থেকে ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের জন্য একটি জটিলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশিংটন একজন সাবেক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে একটি ব্যর্থ মার্কিন ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
কুগেলম্যান মন্তব্য করেছেন, তার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কারণে, 'ট্রাম্পের পক্ষে এটি (মামলা) বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া কঠিন হবে।'
ভারত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের [এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও] নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মোদির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প সরাসরি মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অপরাধ নিয়ে একসাথে কাজ করছে। তিনি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তিকে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের অনুমতি দেওয়ার উদাহরণ দেন।