ভূমিহীন মিমকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেবেন ডিসি, সরকার সিদ্ধান্ত দিলে পুলিশে যোগদান
মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরি নিয়ে অনিশ্চিয়তা কাটেনি খুলনার মিম আক্তারের। তবে এখনও আশা একেবারে মিইয়ে যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মিমকে ঘর দেবেন খুলনা জেলা প্রশাসক।
খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ হেড কোয়ার্টারকে মিমের সার্বিক বিষয় জানানো হয়েছে। সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। সেখান থেকে ফিরতি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দুই-একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
মিম আক্তার খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডে ডাক্তার বাবর আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বাবা মো. রবিউল ইসলাম খুলনার বয়রা ক্রস রোডে ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে লেপ-তোশকের ব্যবসা করেন। টানা ৩২ বছর ধরে এই এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন রবিউল ইসলাম। মিম আক্তারের জন্ম খুলনাতে। জন্ম সনদ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রও খুলনার।
পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় আবেদনের পর ২৫ অক্টোবর খুলনা শিরোমনি পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই হয়। শারীরিক পরীক্ষার পর লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষাতেও প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন মিম।
মেডিকেলেও উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিপত্তি বাধে পুলিশ ভেরিফিকেশনে। জটিলতা দেখা দেয় স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ মিমকে জানিয়ে দেন স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর শুরু হয় আলোচনা।
মিম আক্তার জানান, 'রোববার (১২ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। জানিয়েছি, স্যার, আমরা ভূমিহীন। মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও আমার চাকুরিটা হচ্ছে না স্থায়ী ঠিকানা না হওয়ায়। ডিসি স্যার বলেছেন, এখানে আমার কিছু করার নেই। এসপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। পরবর্তীতে এসপি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। এসপি স্যার ছুটিতে রয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্যার বলেছেন, তোমার বিষয়টি আমাদের মধ্যে খুব আলোচনা হচ্ছে। আমরা কাগজপত্র পুলিশ হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলোচনা চলছে।'
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, 'মেয়েটি আমার কাছে এসেছিল। ঘটনাপ্রবাহ জানিয়েছে, তবে পুলিশে নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কোন করণীয় নেই। যেহেতু তারা ভূমিহীন, সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাদের ঘর দেওয়া হবে। যেন মেয়েটি ও তার পরিবার স্থায়ী একটি ঠিকানা পায়।'
খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ জানান, এখনো মিমের পুলিশে চাকরির সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো বিষয়টি পুলিশ হেড কোয়ার্টার পর্যালোচনা করছে। দ্রুতই মিমের চাকরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পুলিশ হেড কোয়াটার থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
মিম আক্তারের চাকরিতে যোগদানের বাধা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া বাকি সবকিছুতেই মেয়েটি পারফেক্ট। খুলনায় তারা দীর্ঘদিন ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন, তাদের কোনো জমি নেই। তার বাবার বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে। সেখানেও তার বাবার নামে কোনো জমি নেই। তার দাদা এখনও জীবিত রয়েছেন। যেহেতু তার দাদা জীবিত, সে কারণে তার বাবার নামে সেখানেও কোন জমি নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। ঠিকানা থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে না বলেই মিমের চাকরি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।