নারীদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেশি: গবেষণা
বাংলাদেশে পুরুষদের তুলনায় নারীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন বেশি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিতে আসা ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৫৯.৫ শতাংশই ছিলেন নারী এবং ৪০.৫ শতাংশ পুরুষ রোগী। এর ভেতরে পুরুষদের মধ্যে মূত্রথলি ও নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নেয়া ক্যান্সার রোগীদের ৭৪.৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও বাকি ২৫.২ শতাংশ শিশু। 'এপিডেমিওলজি অফ ক্যান্সারস অ্যাট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ): অ্যানালাইসিস অফ হসপিটাল ডেটা' শীর্ষক দুটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের সেবা গ্রহণের তথ্য সংগ্রহে বিএসএমএমইউ-তে একটি এক বছর মেয়াদী প্যাথলজিভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি ও একটি একমাস মেয়াদী হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বুধবার সকালে এক সেমিনারে গবেষণা দুটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ-এর ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসের সহযোগী অধ্যাপক ডা. খালেকুজ্জামান এবং একই বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা ডা. শাহরিন ই. রায়না।
গত ১ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত বিএসএমএমইউ-এর সার্জারি বিভাগে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ডায়াগনোসিসের জন্য যারা টিউমারের নমুনা জমা করেছেন, তাদের কাছ থেকে ক্যানরেজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল ২১ হাজার ১৭৫টি ডায়াগনোসিসের নমুনা। এর মধ্যে ১৭ শতাংশতে ক্যান্সার শণাক্ত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তের মধ্যে ৫৯.৫ শতাংশই নারী এবং বাকি ৪০.৫ শতাংশ পুরুষ। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে কম বয়সে ক্যান্সার আক্রান্তের হারও বেশি। ১৫ বছর বয়স থেকেই নারীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ৪৬ বছরের মধ্যে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
এদিক থেকে আবার পুরুষদের বেশির ভাগই ২০ বছরের পর থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন; আর ৫০ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রধান ক্যান্সারগুলোর মধ্যে রয়েছে- মূত্রথলির ক্যান্সার ১০.২ শতাংশ, প্রটেস্ট ক্যান্সার ৯.৯ শতাংশ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার ৮.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, নারীদের ২৩.৩ শতাংশই আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে, ২১.৫ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সারে এবং মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ৮.৯ শতাংশ।
হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, মোট রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৫৬ জন। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ১ হাজার ২৩৮ জন এবং শিশু ৪১৮ জন। শিশু ছেলেরা প্রধানত লিউকেমিয়া (৭১.৫ শতাংশ) এবং লিম্ফোমা (১০.৩ শতাংশ) ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর শিশু মেয়েদের মধ্যে লিউকেমিয়াতে (৬৬.৫ শতাংশ) আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি এবং এরপরেই রয়েছে হাড়ের ক্যান্সার (১১.৬ শতাংশ)।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ-এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, "বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ক্যান্সার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। যাতে দেশে সঠিকভাবে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা নির্ণয় করা যায়, পাশাপাশি ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ ও উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়।"