তিন মাস আগে মারা গেছেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে মারা গেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন মাস আগেই তিনি মারা যান।
তিন মাস আগে মারা গেলেও এতদিন এ তথ্য জানা যায়নি। মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানান তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সে সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।
মঙ্গলবার আশিক চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- 'ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন'। নিজের ছবির সাথে হারিছ চৌধুরীর একটি ছবি যুক্ত করে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন। এরপর স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন লিখে কমেন্ট করতে থাকেন।
আশিক চৌধুরী বুধবার বলেন, হারিছ চৌধুরী গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডে মারা যান। আমি তখন আমেরিকায় ছিলাম। মৃত্যুর পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।
আশিক বলেন, আগস্টে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনার ধকল সাময়িক কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান হারিছ চৌধুরী।
মৃত্যুর খবর এতদিন গোপন রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গোপন রাখা হয়নি। কেউ তার খোঁজ নেয়নি বলে জানতে পারেনি।আমি এমনিতেই ফেসবুকে লিখেছিলাম। এখন অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন।'
হারিছের মৃত্যুর প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাহের চৌধুরী বলেন, 'দুই-তিন মাস আগেই তিনি মারা গেছেন বলে শুনেছি। আমি শুনেছি তিনি ঢাকায় মারা গেছেন। সেখানেই তার দাফন হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে কথা বলাটা ঝুঁকিপূর্ণ।'
হারিছের মৃত্যর খবর কাউকে জানিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাহের বলেন, 'দলের নেতারা জানেন। অন্য কেউ আমার কাছে কখনো জানতে চাননি।'
জানা গেছে, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকতেন। তার ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির সপ্তাহখানেক পর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে বেড়াতে আসেন হারিছ চৌধুরী। ওই রাতেই যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়, তবে তাকে তারা খুঁজে পায়নি। এরপর কয়েক দিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান হারিছ। এরপর তিনি ওঠেন নানার বাড়ি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে। এরপর পাকিস্তান হয়ে ইরানে তার ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে পৌঁছান এমন খবরও চাউর হয়। এর কয়েক বছর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে যান। সেখান থেকে ভারতে যাতায়াত করতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন বলে একাধিক সূত্র বিভিন্ন সময় নিশ্চিত করেছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একইবছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।