ইভিএম নিয়ে অনেকের বিড়ম্বনার মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ
শেষ হয়েছে বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। কোনো ভোটকেন্দ্রেই ঘটেনি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি বা সংঘর্ষের ঘটনা।
আজ রোববার (১৬ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার ১৯২টি কেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে, শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
তবে বেলা ৪টার দিকেও অনেক ভোটারকে ভোটদানের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, অপেক্ষারতরা ভোটদানের সুযোগ পাবে।
৪টার পরও অনেক ভোটারকে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করতে দেখা যায়, তবে তাদের বাধা দিয়েছে দায়িত্বরত পুলিশ।
বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, মোট ৫০-৫৫ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটদানে সমস্যার সম্মুখীন হন অনেক ভোটার। এছাড়া, দেশে করোনা সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও অনেককেই ভোটকেন্দ্রে এসে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘণ করতে দেখা যায়।
এ নির্বাচনে দেশের প্রথম নারী মেয়র এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হলে, তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র হবেন।
অন্যদিকে মেয়র পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকার জিতলে বিরোধী দলগুলো ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের 'গ্রহণযোগ্যতা' নিয়ে আরও বেশি বেশি প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে।
দুপুর ১:৩০
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮টি বুথের প্রতিটিতেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডেটাবেজের সঙ্গে আঙুলের ছাপ না মেলায় গড়ে অন্তত ৪ থেকে ৫ জন ভোটার ভোট দিতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট ভোটারদের ভোট দিতে বিকেলে আবারও আসতে বলেছেন ইসি কর্মকর্তারা।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৭ নং ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বিশ্বনাথ শুত্রধর বলেন, "আমরা আঙ্গুলের ছাপ না মেলার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।"
তিনি বলেন, "বারবার চেষ্টা করেও যদি তারা ভোট দিতে না পারেন, তাহলে আমরা মনোনীত প্রিসাইডিং অফিসারের আঙুলের ছাপ দিয়ে তাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দেব।"
এই পদ্ধতিতে কতজন ভোট দিতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ভোটারদের ১ থেকে ২ শতাংশ এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন।"
দুপুর ১২:০৫
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুস্তাইন বিল্লাহ জানান, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্নের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সকাল ১১:৫০
নগরীর মাউরা পট্টি এলাকার বাসিন্দা জরিনা বেগমের নিজের প্রকৃত বয়স মনে নেই কিন্তু ভোট দেওয়ার পর তার মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
তিনি বলেন, "আমার আপন বলতে কেউ নেই। নেই কোন সন্তান বা আত্মীয় স্বজন। আমি নিজেই ভোট দিতে এসেছি এবং দিয়েছিও।"
ইভিএম নিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, "৮০-৯০ বছর বয়সে এসে যন্ত্রের সাহায্যে ভোট দেওয়া আমাদের জন্য কঠিনই। কিন্তু আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমি ভোট দেই।
ভোট দেওয়া শেষে জুই বালা পোদ্দার (৯৩) ছেলে ভোলানাথ পোদ্দারের সাথে ফিরছিলেন।
টিবিএসের সাথে আলাপকালে ভোলানাথ বলেন, শহরের উন্নয়নের জন্য মেয়র বা কাউন্সিলর নির্বাচন করা তাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, "বয়সের কারণে ভোটকেন্দ্রে আসা থেকে বিরত থাকা যাবে না। আমার মা ঠিকই তার ভোট দিয়েছেন এবং আপনাদেরও ভোট দেওয়া কর্তব্য।"
সকাল ১১:১৫
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরে শত শত নারী ভোটারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
চাষাড়া, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ওয়েটিং লাইন থেকে শুরু করে ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপে ভোট দিতে নারী ভোটারদের প্রত্যেকের ১০-৩০ মিনিট সময় লাগছে।
সকাল ১০:৩০
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসি ল্যান্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ) কোহিনুর আক্তার টিবিএসকে বলেন, "১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ড আমার এখতিয়ারে রয়েছে। মোট ২৯টি কেন্দ্র এই ওয়ার্ডের অধীনে। কোন কেন্দ্রে এখনও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি। কিছু কেন্দ্রের সামনে মানুষের ভিড় ছিল; তবে তা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে।"
তিনি মিজমিজি পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
সকাল ১০টা
২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর ভোটকেন্দ্রের ৪ নং বুথের পোলিং এজেন্ট মৃণাল চন্দ্র দাস টিবিএসকে জানিয়েছেন, নারীদের ইভিএমে ভোট দিতে একটু বেশি সময় লাগছে। এলাকার মানুষ এই মেশিন নিয়ে খুব একটা অভিজ্ঞ নয়। তাই তারা ভুল করছে বলে জানান তিনি।
নারীরা ভোট দেওয়ার সময়, সহযোগিতার জন্য একজন ব্যক্তিকে সবসময় থাকতে হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই বুথে ৩৯ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান মৃণাল চন্দ্র।
সকাল ৯টা ২৫
প্রিসাইডিং অফিসার এইচএমএ মালেক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকাল থেকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দলোক হাইস্কুল কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।"
সকাল ৯টা বেজে ২৫ মিনিট পর্যন্ত ৩৯৯ জনের মধ্যে ২৯ জন ভোটার কেন্দ্রের ৬ নম্বর বুথে ভোট দিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দল ব্যতীত অন্য প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা সকল দলের এজেন্টদের কার্ড দিয়েছি, যারা আবেদন করেছেন। তবে কেন্দ্রে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব নয়।"
ভোটার বাদল মিয়া টিবিএসকে বলেন, "আমার মনে সহিংসতার ভয় ছিল; তবে কেন্দ্রে আসার পরে তা দূর হয়েছে। এখানে সবাই সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিয়েছেন।"
কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম বলেন, "এই কেন্দ্রে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।"
আগের দুটি নির্বাচন
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) দেশের সপ্তম বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশন। ২০১১ সালে পুরনো নারায়ণগঞ্জ ও কদমরসুল পৌরসভাকে এক করে এটি গঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী প্রথমবারের নির্বাচনে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোটের ৬৫ শতাংশ পেয়ে সেই নির্বাচনে জয়ী হন।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট, যা ছিল মোট ভোটের ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের নির্বাচনে কৌশলগত কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি। যার ফলশ্রুতিতে বিশাল ভোটে জয়লাভ করেন আইভী।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে আইভী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছিলেন ৯৬ হাজার ৭০০ ভোট।
যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সারা দেশে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গিয়েছিল, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে এই প্রভাব খুব একটা পড়তে দেখা যায়নি।