মধুপুর শালবনে শিল্পপার্ক স্থাপনে পিছু হটলো বিসিক
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায় টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনের সংরক্ষিত বনভূমিতে ২১৪ একরের শিল্পপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বিসিকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ রাশেদুর রহমান বলেন, "পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দেওয়ায়, ওই নির্ধারিত জায়গা শিল্পনগরী স্থাপন করা হবে না।"
তিনি বলেন, "ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপার্ক স্থাপনে নতুন জায়গা নির্বাচনেমধুপুর এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। আগামী মাসের মধ্যে একটি টিম ওই এলাকা পরিদর্শন করে সুবিধাজনক জায়গায় নির্বাচন করবে, যাতে পরিবেশ বা শালবনের ক্ষতি না হয়।"
মধুপুর অঞ্চলে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য জায়গা খূঁজতে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি পর্যবেক্ষনকারী দল সেখানে যাবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ এবং বনের সুরক্ষার কথা মাথায় রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাধীন বেরীবাইদ মৌজায় ২১৪ একর জায়গায় আনারস ও ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপার্কগড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল বিসিক।
এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ফল প্রক্রিয়াকরণে সম্পৃক্ত উদ্যোক্তাদের এক ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে শিল্পপার্কে প্লট তৈরী করে বরাদ্দ দেবে বিসিক।
শিল্পপার্ক স্থাপনে নির্ধারিত জায়গাটি মূলত টাঙ্গাইল বন বিভাগের; রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাভুক্ত এটি। রিজার্ভ ফরেষ্টের মধ্যে শিল্পপার্ক গড়তে আপত্তি জানিয়ে ছাড়পত্র দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর।
এমনকি শালবনে শিল্পপার্ক স্থাপন নিয়ে 'যুদ্ধে একটি রিজার্ভ ফরেস্ট ও শিল্পপার্ক' শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। এরপর শিল্পমন্ত্রণালয়ও ওই নির্ধারিত জায়গায় শিল্পপার্ক স্থাপনে আপত্তি তোলে।
আরও পড়ুন: A reserve forest and an industrial park at war
২০২০ এ টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস ও ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পপার্ক গড়ার উদ্যোগ নেয় বিসিক।
মধুপুরের বেরীবাইদ মৌজায় আরএস-২ খতিয়ানে ১৪ নম্বর দাগে ২১৪ একর জায়গা শিল্পপার্ক স্থাপনের জন্য চিহ্নিত করে বিসিক, এই জায়গাটি মধুপুর-ময়মনসিংহ সড়ক সংলগ্ন।
পরিবেশের কর্মকর্তারা টিবিএসকে জানান, চিহ্নিত জায়গায় প্রচুর শাল গাছ ও ভেষজ বাগান আছে। স্থানীয়দের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ২০০৩ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীও চলছে। এই শিল্পপার্ক স্থাপন করা হলে পরিবেশের ক্ষতির সঙ্গে স্থানীয়রাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এক্সিকিউটিভ সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, "মধুপুরের সংরক্ষিত এলাকায় শিল্পপার্ক স্থাপনে বিসিকের এই আবেদন বে-আইনী। দেশের সংবিধান, বন আইন ও আদালতের নির্দেশনা থাকতে এখানে তারা শিল্পনগরী স্থাপন করতে পারে না।"
মধুপুরে শিল্পপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ যে কারণে
মধুপুর আনারস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলটিতে প্রতিবছর আনারসসহ অন্যান্য ফল উৎপাদিত হলেও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে আনারস সংরক্ষণে একটি শিল্প গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের অক্টোবরে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি পিইসি সভা করে বিসিক।
ওই সভায় উদ্যোক্তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা ও যাতায়াত সুবিধার কারণে মুক্তাগাছা ও ময়মনসিংহের পরিবর্তে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় শিল্পপার্ক স্থাপনের পক্ষে মত দেন।
তারপর ২০২০ সালে বিসিকের কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মধুপুরের বেরীবাইদ মৌজা পরিদর্শন করেন।
২০২১ এর শুরুর দিকে 'বিসিক মধুপুর শিল্পপার্ক (আনারস ও ফল প্রক্রিয়াকরণ)' গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
'বিসিক মধুপুর শিল্পপার্ক (আনারস ও ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ), টাঙ্গাইল' প্রকল্পকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প উল্লেখ করে জমি অধিগ্রহণের অনাপত্তিপত্র চেয়ে টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় বিসিক।
ছাড়পত্র চেয়ে ২০২১ সালের জুনে টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে চিঠি দেয় বিসিক।
প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পটির মাধ্যম্যে জমি অধিগ্রহণের পর মাটি ভরাট করে রাস্তা, ড্রেন-কালভার্ট, ডাম্পিং ইয়ার্ড, সিইটিপি, পানি ও বিদ্যু লাইনসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো সুবিধাদি নির্মাণের কথা জানানো হয়।
বিসিকের চিঠির প্রতিউত্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য চাওয়া জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, টাঙ্গাইলের নামে লিপিবদ্ধ।
"পরিবেশ অধিদপ্তরের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, উক্ত ভূমিতে বন বিভাগের গাছপালা হয়েছে। উল্লেখিত তফসিলভুক্ত জমিতে অধিগ্রহণের বিষয়ে বন অধিদপ্তরের পূর্বানোমোদন ব্যতীত অনাপত্তি প্রদান করা সম্ভব নয়," বলে ফিরতি চিঠিতে জানানো হয়।