মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে ‘স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি’র, অবহেলিত থাকছে উন্নয়ন
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় ধরে ২০১৭ সালের শুরু থেকে চলে আসা কর্মসূচির অনেক লক্ষ্যই এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি। বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও।
মহামারির কারণে বেশ কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় চলতি বছরের জুলাইয়ে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া 'চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি' আরও এক বছরের জন্য সম্প্রসারণ করতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
সাড়ে পাঁচ বছরের জন্য নেওয়া কর্মসূচিটি আরও এক বছর বাড়তি মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে ব্যয় বাড়ছে ৩০ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকারও বেশি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়।
এদিকে, গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা মোট উন্নয়ন বরাদ্দের ৬৩ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় অতিরিক্ত উন্নয়ন ব্যয়ের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
কর্মসূচির অগ্রগতির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের মতো খাতগুলোতে বরাদ্দের তুলনায় ব্যয় হয়েছে অনেক কম; অন্যদিকে, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের মতো উপখাতগুলোর অগ্রগতি আবার উল্লেখযোগ্য।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করোনা মহামারিতে উন্নয়ন কাজে বাধা আসলেও কর্মসূচি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত বরাদ্দের ২৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হবে রাজস্ব খাতে, তথা বেতন ভাতা পরিশোধের মতো নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায়।
বাড়ছে না বিদেশি সহায়তা
স্বাস্থ্য খাতের বিশাল এ কর্মসূচিতে বিদেশি সহায়তা খাতে বরাদ্দ ছিল মোট ব্যয়ের মাত্র ১৬.৩২ শতাংশ। সংশোধিত প্রস্তাবে বিদেশি সহায়তা প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র ১২.৯৬ শতাংশ।
শতকরা হিসাবে বিদেশি সহায়তা কমলেও টাকার অংকে তা ৬১ কোটি টাকা বেড়ে ১৮ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা হয়েছে।
তবে এ সহায়তার কতটা ছাড়া হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৯৭৭.৭৭ কোটি টাকা বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৯১০.৫০ কোটি টাকা বা ৪৬০ মিলিয়ন ডলার কোথায় থেকে আসবে তা জানতে চেয়েছে কমিশন।
অবশ্য বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পে মোট ১৬টি দাতা দেশ ও সংস্থা অর্থায়ন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হলে জনগণ এর সুবিধাও পাবে দেরিতে।
মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলোর ওপর কর্তৃপক্ষ যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোকে তিনি আরও ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার বিশাল অবকাঠামো গড়ে উঠলেও মানবসম্পদ ও মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতির অভাবে মানসম্মত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বিদ্যমান অবকাঠামোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং দক্ষ জনবল দিয়ে তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।