তদারকির অভাবে ঘাসের বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে সেনবাগ স্টেডিয়াম
এক কোনায় বসে ঘাস কাটছেন কয়েকজন, কেউ-বা আবার মাছ ধরার পর জাল রোদে শুকাচ্ছেন। মাঝখানের ছোট্ট একটি অংশে কয়েকজন কিশোর বল ব্যাট হাতে সময় কাটাচ্ছেন। এটুকু ছাড়া যতদূর চোখ যায় চারদিকে ঘাস আর ঘাস, যা ওজন করলে কয়েক টন হবে। জঙ্গলের মত হয়ে থাকা ঘাসের ভিতর রয়েছে সাপ, বিচ্ছুরমত বিষাক্ত প্রতঙ্গ।
এমন অবস্থা নোয়াখালী সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রামে অবস্থিত 'বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যা স্টেডিয়ামটির। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটি স্টেডিয়াম।
সঠিক তদারকি ও দেখবালের অভাবে এ স্টেডিয়াম চত্বর ইতোমধ্যে মাদক সেবিধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বেহাল দশা স্টেডিয়ামের ভিতর ও বাইরের প্রতিটি অংশে।
স্থানীয়দের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ স্টেডিয়ামটি আজ জরাজীর্ণ প্রায়, তবে কর্তৃপক্ষ বলছে স্টেডিয়াম উদ্বোধন হলেও মাঠ তৈরি না করায় শুরু থেকেই এভাবে পড়ে আছে স্টেডিয়ামটি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেডিয়ামটি খেলা উপযোগী করা যাবে বলে দাবী কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামটির ভিতরের চার পাশ ঘাসের বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দু'টি দর্শক গ্যালারি, যার দর্শক ধারণ ক্ষমতা ছিল ৫০০০। একই অবস্থা কমেন্টারিবক্স ও অফিস কক্ষের।
সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থা বলছে, ২০০৭ সালে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধনের পর থেকে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নিজেদের তহবিল থেকে সব খরচ বহন করতে হয়।
সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, "বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে প্রায় ৮০হাজার টাকা। এছাড়াও জমি উন্নয়ন কর বাৎসরিক ৫০ হাজার টাকা করে ভূমি কার্যালয়ে জমা দিতে হয়, যার বর্তমান বকেয়া প্রায় দেড় লাখ টাকা। সরকারি কোন বরাদ্দ না থাকায় ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বে যারাই আসেন তারা নিজস্ব তহবিল থেকে এসব খরচ বহন করতে হয়"।
২০০৪ সালে ১০ দশমিক ৩০একর জমির ওপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের অধিনে সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নে স্থাপন করা হয় 'সেনবাগ স্টেডিয়াম'। যার পরবর্তীতে 'বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যা স্টেডিয়াম' নামে নামকরণ করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এ স্টেডিয়ামে দু'টি বড় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে ২০০৮ সালে চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ও ২০১২ বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট।
দু'টি টুর্নামেন্টের মাঝে শীতকালীন ও স্কুল পর্যায়ের কয়েকটি খেলা হয়েছিল এখানে। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে স্টেডিয়ামটিতে বন্ধ হয়ে যায় সকল ধরনের খেলাধুলা।
স্থানীয় আহসান হাবিব বলেন, "বর্তমানে স্টেডিয়ামটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। রাত হলে শিয়ালের শব্দ পাওয়া যায়, সাপের ভয়ে এখানে মানুষ আসেনা। বর্তমানে এখানে স্থায়ীভাবে ঘাসচাষ হচ্ছে। এখানের ঘাসগুলো কেটে কক্সবাজারের উখিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ঘাসগুলো পানের বরজ ও চন হিসেবে কাঁচা ঘরের কাজে ব্যবহার করা হয়। স্টেডিয়ার তৈরির আগে এখানে কৃষি জমি ছিলো, যেখানে শত শত মণ ধান উৎপাদন হতো।"
স্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারিসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় মাদকসেবীদের আড্ডা প্রতিদিনই বাড়ছে, বহিরাগত ও মাদক সেবীদের স্টেডিয়ামে আসতে বাধা দিলে তারা তাকে প্রাণ নাশেরও হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন স্টেডিয়ামের কেয়ারটেকার দ্বীন মোহাম্মদ।
ইউছুফ নামের সাবেক এক খেলোয়াড় বলেন, "সেনবাগ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিভাগীয় পর্যায়ে আক্তার, সেলিম ও নরেশ দাদাসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় খেলেছেন। কিন্তু বর্তমানে খেলোয়াড় সৃষ্টির জন্য আমাদের একটি স্টেডিয়াম থাকলেও সঠিক তদারকির অভাবে স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগি না হওয়ায় এ সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারছি না।"
বর্তমানে শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করার সুযোগ না পাওয়ায় মোবাইল, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে, বলেন তিনি। আগামীতে এ অঞ্চল থেকে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে স্টেডিয়ামি দ্রুত সংষ্কারের দাবী জানান তিনি।
কয়েকদিন আগে গেইটসহ স্টেডিয়ামের বাইরের অংশে রং করার কাজ করে দায়িত্বরত কমিটি, তবে ভেতরের অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত।
সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, ধান ক্ষেতের ওপর স্টেডিয়াম করলেও তাতে মাঠ না করায় বর্ষাকালে হাঁটু পরিমাণ পানি ও পরে ঘাসে উঠে গরুর চরণভূমি হয়।
বর্তমান যুব সমাজকে মাদক ও মোবাইল আসক্তিতে দূরে রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগী করা জরুরি মনে করেন তিনি।