খায়রুজ্জামানের হস্তান্তর স্থগিত করলো মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট
সাবেক বাংলাদেশি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট।
খায়রুজ্জামানকে যাতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা না হয়, সেজন্য আজ মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের বিরুদ্ধে এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ মঞ্জুর করেছেন দেশটির উচ্চ আদালত।
খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিতা রহমানের দায়ের করা রিট (হেবিয়াস কর্পাস) আবেদনের শুনানিকালে মালয়েশিয়ার হাইকোর্টের বিচারক মোহাম্মদ জাইনি মাজলান এই আদেশ দেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
হেবিয়াস কর্পাস এমন একটি রিট যা, কোনো ব্যক্তিকে অবৈধ বা বেআইনিভাবে কারাবাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এই রিট বিশেষ করে ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দায়ের করা হয়।
খায়রুজ্জামানের স্থগিতাদেশের আবেদন মঞ্জুরকালে বিচারক জাইনি বলেন, "আমি শুনতে চাই না যে, আমি যেই রায় দিয়েছি তার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।"
এর আগে খায়রুজ্জামানের আইনজীবী এডমন্ড বন, গতবছর আদালতের আদেশ সত্ত্বেও অভিবাসন কর্মকর্তাদের দ্বারা মিয়ানমারের বন্দীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, "আমি আশা করছি অভিবাসন বিভাগ বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নেবে না।"
খায়রুজ্জামানের হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২০ মে তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়, খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিতা রহমান আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে স্বামীর অবস্থান সম্পর্কে জানার আবেদন করেন তিনি।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে তিনি বলেন, "আমি জানতে চাই আমার স্বামী কোথায় আছে এবং সম্ভব হলে তার সঙ্গেও কথা বলুন।"
৬৫ বছর বয়সী সাবেক কূটনীতিক এম খায়রুজ্জামান ২০০৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অভিবাসন পুলিশ।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এম খায়রুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সরকার পরিবর্তন হলে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান তিনি।
২০০৭ সালে খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর দুই বছর পর আবারও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশনা অমান্য করে ২০০৯ সাল থেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে মালয়েশিয়ায় থাকছিলেন খায়রুজ্জামান।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন পুলিশকর্তৃক সাবেক এই হাইকমিশনারকে গ্রেপ্তারের পর, এখন বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলাকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করার উপায় খুঁজছে।