৫৪০টি আইসিইউ বেড পাচ্ছে ৫৩টি হাসপাতাল
গত বছরের জুলাইয়ে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে (ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ভর্তির জন্য ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পথেই মারা গেছেন কোভিড আক্রান্ত মাদারীপুরের বিল্লাল সরদার। জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা থাকলে তাকে বাঁচানো যেতো বলে মনে করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের বিল্লাল সরদারের মত যেনো আইসিইউয়ের অভাবে আর কারো মৃত্যু না হয়, সেজন্য জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের সকল সরকারি কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে।
গুরুতর রোগীদের আইসিইউ সেবা দিতে ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৪৩টি জেলা হাসপাতালে ৫৪০ টি আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ চলছে। ধাপে ধাপে চলতি বছরের মে থেকে আগস্টের মধ্যে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ কার্যক্রম চালু করা হবে। এর ফলে জেলা পর্যায়ে আইসিইউ সেবা পাবেন গুরুতর রোগীরা; সেইসঙ্গে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই কমবে।
বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডেমিক প্রিপারনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের অধীনে ৪৩টি জেলা হাসপাতাল ও বরিশাল, খুলনা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, সিলেট, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, দিনাজপুর ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজসহ ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যুক্ত হচ্ছে ১০টি করে আইসিইউ বেড। পাশপাশি প্রকল্পের অংশ হিসেবে আধুনিক দক্ষতা ও জ্ঞানসম্পন্ন সাড়ে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ধাক্কায় আইসিইউয়ের অভাবে অনেক কোভিড রোগী মারা গেছেন। সেই সময়েই, ২০২০ সালের ২ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা শহরে আইসিইউ স্থাপনের নির্দেশ দেন।
ইআরপিপি প্রকল্পের পরিচালক ডা.শাহ গোলাম নবী তুহিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, ৬৪টি জেলা হাসপাতালেই আইসিইউ স্থাপনের কথা ছিল। তবে প্রকল্পের আওতায় নতুন কোনো ভবন তৈরি করা হচ্ছেনা। বিদ্যমান ভবনগুলোই সংস্কার করা হবে। গণপূর্ত বিভাগের সমীক্ষার ভিত্তিতে ৪৩টি জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে ভবন সংস্কারের কাজ চলবে।
তিনি বলেন, "১৯টি জেলায় সংস্কারের জায়গা নেই। সে কারণে এ প্রকল্পের আওতায় এখন শুধু ৪৩টি জেলায় আইসিইউ স্থাপন করা হচ্ছে।"
তবে এ প্রকল্পের বাইরে সরকারের রাজস্ব বাজেট দিয়েও বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ বেড স্থাপন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, যশোর, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, মাদারীপুর জেলা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের জন্য ভবন সংস্কারের কাজ শেষ হবে এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে। আর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ১৩টি জেলা হাসপাতালে চালু হবে আইসিইউ কার্যক্রম।
কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, বরগুনা, নীলফামারী, মাগুরা, ঠাঁকুরগাও, ভোলা, নাটোর, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহসহ ১৩টি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ চালু হবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে।
তবে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাজবাড়ী, নড়াইল, খুলনা, মেহেরপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, লক্ষীপুর, সিলেট, শরীয়তপুর, জয়পুরহাট, নরসিংদী, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজারসহ ১৬টি জেলার সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারিত না হওয়ায় এগুলোতে আগামী অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে আইসিইউ চালু হবে।
এরইমধ্যে ঢাকার সংক্রামক ব্যাধী হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে ৫টি করে আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।
ডা. শাহ গোলাম নবী তুহিন জানিয়েছেন, আইসিইউ যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৮টি মেডিকেল কলেজে আইসিইউ বেড ও আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতি পাঠানোও হয়েছে ইতোমধ্যে।
তিনি বলেন, "কোভিড রোগীদের সেবা দিতেই জেলা পর্যায়ে আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শুধু করোনা মহামারি প্রতিরোধে নয়, অন্য যেকোনো রোগের চিকিৎসায় এখন রোগীদের আইসিইউয়ের জন্য ঢাকা বা বড় শহরে যাওয়ার কষ্ট ও খরচ কমবে।"
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির টিবিএসকে বলেন, "আইসিইউ বেড বাড়ানোর পাশাপাশি আইসিইউ পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবলও নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশে আইসিইউ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট রয়েছেন। এছাড়া জনবল যা প্রয়োজন হবে, তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হবে।"
জেলা পর্যায়ে আইসিইউ নির্মিত হলে ঢাকার বাইরে থেকে জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগীদের ঢাকায় আসতে হবেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে আইসিইউ বেড রয়েছে ১ হাজার ২৬২টি। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটনে ৭৭৩টি এবং চট্টগ্রাম মহানগরে রয়েছে ৬৪টি। বিভাগীয় শহর ও মেডিকেল কলেজের বাইরে এখন মাত্র ৬টি জেলা হাসপাতালে মাত্র ৩০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।