পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে তালা
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ১৭ দফা দাবিতে তারা রেজিস্ট্রার অফিসে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, করোনাকালে অর্ধেক জনবল নিয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত অফিস, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কর্মকর্তাদের উচ্চতর স্কেল প্রদান, অটো পদোন্নতি ও শূন্যপদে বিভাগীয় প্রার্থীদের পদোন্নতি, নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সকল উচ্চতর পদের কর্মকর্তাদের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত, আপগ্রেডেশন/পদোন্নতি নীতিমালা সংশোধন, ৪ শতাংশ হারে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত এবং অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে নবনিযুক্ত দুইজনের আপগ্রেডেশনের শর্ত বিলুপ্তকরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ হোসেন বলেন, "অনেক আগেই আমরা এসব দাবি উপাচার্যের কাছে তুলে ধরেছি। কিন্তু উনি মেনে না নিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। আমরা সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেই। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ২৫ জানুয়ারি উপাচার্য আমাদের তার বাসভবনে ডেকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দাবিগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন কমিটি করে দেন। আসলে এর মাধ্যমে আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঠেকিয়ে রাখছেন। আমাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি।"
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করে আমাদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। উপাচার্য এ বিষয়ে আরও ২-৩ দিন সময়ে চেয়েছেন বলে রেজিস্ট্রার আমাদের জানান। গত দুই দিনেও কোনো কার্যক্রম না দেখে, আজকে আমরা তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করি।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এই উপাচার্যের মেয়াদ আগামী ৬ মার্চ শেষ হলে পরবর্তী উপাচার্য আসার পরও আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে আন্দোলনের আভাস পেয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত গভীর রাতে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ এবং গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের পর থেকেই ক্যাম্পাসে এক প্রকার চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরপর কর্মকর্তারা তালা ঝুলিয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দিলে অবস্থার অবনতির কথা ভেবে উপাচার্য গোপনে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। অন্যতম সহযোগী ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে করে উপাচার্য এখন ঢাকাস্থ পাবিপ্রবির গেস্ট হাউসে অবস্থান করছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি।
কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম জানা, সকালে কর্মকর্তারা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে আমার অফিসে তালা দিয়েছেন। ফলে আমার দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে আমি ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছি।
গোপনে উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমিও শুনেছি উপাচার্য ক্যাম্পাস থেকে চলে গেছেন। কিন্তু আমি সঠিকভাবে জানি না। উনি এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসে নেই, এটা জানি। আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি।"
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, "কী কাজ? আমার সঙ্গে আর কোনো কাজ নেই।" এরপরই ফোন কেটে দেন।
আগামী ৬ মার্চ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নিয়োগ পাওয়া এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে শতাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদ শেষের দিকে তিনি সেকশন অফিসার পদে নিজের আপন ভাতিজি কানিজ ফাতেমা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওলিউল্লাহসহ ১০২টি পদে নানা অনিয়মে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়োগ বাতিলসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।