গাবতলী পৌঁছাতেই যানজট ও ধুলায় নাকাল যাত্রীরা
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, সালেহপুর এলাকার মাত্র ৩ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতেই রাজধানীগামী মানুষের সময় লেগে যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। যানজটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ধুলার কারণে নাভিশ্বাস এ মহাসড়কের যাত্রীদের। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই দীর্ঘ হতে থাকে গাড়ির সারি আর এ যানজট মধ্য রাতেও থাকে ৮-১০ কিলোমিটার জুড়ে।
জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারের সালেহপুর সেতুর একাংশের গার্ডারে ফাটল দেখা দেয়ার পর থেকে দুর্ভোগ বাড়তে থাকে এই পথের যাত্রীদের। এরপরে বেশ কয়েকদিন ধরে চলে এ সেতুটির সংস্কারের কাজ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঢাকা ডিভিশন এ সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে জানালেও সেতুতে ভারি যানবাহন চলাচলে এখনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সালেহপুর সেতুর সামনের অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানিয়ে রাজধানী অভিমুখের যানবাহনগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এছাড়া এ অংশে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের চলাচল পর্যবেক্ষণ করলেও অসহনীয় যানজট ও ধুলার প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে পারছে না।
গত মঙ্গলবার এ সড়টির আমিনবাজার, সালেহপুর, হেমায়েতপুর অংশ ঘুরে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সালেহপুর সেতুর দুই পাশেই বিকালের দিকে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। এখানকার প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তায় ধুলার সাদা চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো সড়ক। কখনও ঢাকামুখী ও আবার কখনও মানিকগঞ্জমুখী যানবাহনের চাপ সামাল দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যেরা। ঢাকামুখী লেনে যখন সিগনাল ছাড়া হচ্ছে, তখন বেপরোয়া গতিতে চলতে শুরু করে যানবাহন। কে, কার আগে যাবে- এ প্রতিযোগিতায় অধিকাংশ গাড়িই মূল সড়ক থেকে মাটির পথে নেমে পড়ছে। সাথে সাথেই পুরো এলাকা ছেয়ে যাচ্ছে ধুলোয়। এমন বেপরোয়া গতি এবং ধুলোর কারণেও ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
রাস্তার অসহনীয় যানজট এবং ধুলোর কারণে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীদের। এছাড়া রাস্তাটির আশপাশের বাসাবাড়ি, দোকানপাটসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও পোহাচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। এমনকি রাস্তা থেকে কয়েকশ মিটার দূরের বাড়িও ধুলোয় সাদা হয়ে পড়ছে। আশপাশের গাছগুলোও দেখে চেনার উপায় নেই।
হেমায়েতপুর থেকে মিরপুরে নিয়মিত অফিস করতে আসেন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সিহাব তালুকদার। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এমন ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সকালে অফিসে যেতে খুব একটা যানজট না পেলেও সন্ধ্যায় ফেরার সময় দেড়-দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হয় এ অল্প একটু পথে। রাস্তায় গাড়ি চলাচলে নেই কোনো শৃঙ্খলা, যে যখন পারে তখন সামনে চলে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির হচ্ছে, অধিকাংশ গাড়িই সালেহপুরের ওখানে মাটিতে নেমে পুরো এলাকা ধুলোয় নিমজ্জিত করছে। বাসের মধ্যে বসে থাকাই তখন দায় হয়ে যায়।"
তিনি আরও বলেন, "এ রাস্তায় চলতে গেলে এক কাপড় দ্বিতীয় দিন পড়ার অবস্থা থাকে না। পুরো কাপড়ে এক স্তরের আবরণ পড়ে যায় ধুলার। আর রাস্তার মধ্যে খানাখন্দের ভোগান্তি তো আছেই।"
ট্রাকচালক সাব্বির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী আসতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। মূল রাস্তায় থাকলে আরও এক ঘণ্টা সময় বেশি লাগতো। অনেকটা পথই রাস্তার বাইরের মাটির রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করেছি। যদিও এতে ঝুঁকি ছিল, এরপরেও সময় বাঁচাতে ধুলোর মধ্য দিয়েই এসেছি।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাস্তায় যানজট দেখে পায়ে হেঁটে আমিনবাজার ব্রিজ পার হচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন। কথা হলে তারা টিবিএসকে বলেন, "ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মধ্যে এ অংশই এখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির। ঢাকায় সন্ধ্যার পরে ফিরলেই এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।" তাই সময় নষ্ট না করে হেঁটেই আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে গাবতলী পৌঁছাবেন তারা।
সাকুরা পরিবহনের যাত্রী আকলিমা খাতুন টিবিএসকে বলেন, "দুপুরে বরিশাল থেকে রওনা দিয়ে হেমায়েতপুরে সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে যাই কিন্তু সন্ধ্যা থেকে এই ২/৩ কিলোমিটার পথ যেতে ২ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে আছি। বাসের সব গ্লাস লাগানো থাকলেও পুরো বাস ধুলায় ভরে যায়। আমার তিন মাসের বাচ্চার এ কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমার নিজেরও এ্যাজমা আছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।"
সড়ক ও জনপথে ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আল মামুন টিবিএসকে বলেন, "সালেহপুর ব্রিজের যে ফাটল তৈরী হয়েছিল সেটি সংস্কার করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। এখন কেন যানজট লাগছে, ধুলা হচ্ছে সে বিষয়ে বলতে পারবো না। এ ব্রিজটির কারণে এখন আর যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে না। এছাড়া নতুন ব্রিজটির কাজ আশা করি এ অর্থবছরের মধ্যেই শেষ হবে। তখন হয়তো যান চলাচল আর একটু নির্বিঘ্ন হবে।"
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "এ সড়কটিতে নিয়মিতই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়েও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আমরা দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। ধুলা আর যানজটের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে তেমন কিছু করার নেই।"
এদিকে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোঃ আব্দুল্লাহ হিল কাফী টিবিএসকে বলেন, "যানজট নিরসনে গাবতলী, আমিনবাজার, হেমায়েতপুরে আমাদের টিমগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে কিন্তু সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থানে সংস্কারের কাজ চলমান থাকায় ইদানিং যানজট বেড়ে গিয়েছে। তবে সন্ধ্যা থেকে আমরা আমিনবাজার এলাকায় অতিরিক্ত টিম দিয়ে থাকি যেন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, বাসগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে। এজন্য আমরা কোথাও কোথাও ইউলুপ বন্ধও করে দেই আবার প্রয়োজন অনুসারে খুলে দেই। আর এখন বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক গাড়ি মাটির রাস্তায় নেমে যাওয়ায় ধুলা বেড়ে যায়। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা আমাদের নেই। পৌরসভাও এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগী নয়।"