স্বাধীনতা পদক পাওয়া আমির হামজা ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি!
চলতি বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন আমির হামজা। মাগুরার বাসিন্দা আমির হামজা ছিলেন যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামি!
এ কারণে আমির হামজার স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মাগুরায়। তিনি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব পাওয়ায় একদিকে মাগুরার সাধারণ মানুষ যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি তিনি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার খেতাব জেতা নিয়ে সুধী সমাজকে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ১০ জনের পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পর থেকেই সাহিত্যে অবদান হিসেবে আমির হামজার নাম ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্রই ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক চলছে।
মো. শাহাদাত হোসেন ফকির নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন আমির হামজা।
আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। শাহাদাত হোসেন ফকিরের বাড়ি আমির হামজার বরিশাট পূর্ব পাড়ায়। ১৯৭৮ সালে জমির ধান কাটা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন শাহাদাত ফকির। ওই হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন আমির হামজা। তাছাড়া শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
শাহাদাত ফকিরের ছেলে দিয়ানত ফকির বলেন, 'গরুতে ক্ষেতের ফসল খাওয়ার ঘটনা নিয়ে আমির হামজার পরিবারের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়। ওই বিরোধের জের ধরে আমির হামজা এবং তার ভাই রব্বানী সরদারের নেতৃত্বে আমার বাবার উপর হামলা চালানো হয়। তারা নির্মমভাবে আমার বাবাকে কুপিয়ে খুন করে। একই সময়ে সাবান মোল্যার আড়াই বছরের শিশু শিল্পীকে সড়কির আঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ১৯৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা।'
দিয়ানত ফকিরের এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় আরও অনেকের কাছ থেকে। ওই মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাভোগ করেন একই গ্রামের আফজাল মোল্যা। তিনি বলেন, "আমির হামজাদের সঙ্গে দল করায় আমি আসামি হয়েছিলাম। এই হত্যা মামলার কারণে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।"
আমির হামজা সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও ক্ষণিক গান রচনা ও পরিবেশনের কারণে তার প্রশংসা করেছেন অনেকে। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নয়, জিয়াউর রহমানকে নিয়েও গান লিখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সামাজিক সংগঠন সারথী ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিএনপি নেতা শিকদার মনজুরুল আলম বলেন, "আমির হামজার প্রথম বই 'বাঘের থাবা' আমি প্রকাশ করে দিয়েছি। তিনি পালাগান করতেন। অনেকে তাকে ভাড়া করে নিয়ে যেতেন। যেখানে বসতেন সেখানেই গান কবিতা লিখে ফেলতেন। অনেককে নিয়ে তার গান কবিতা আছে।"
আমির হামজার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার এই পদকপ্রাপ্তির জন্যে আবেদন করেছিলেন তার সন্তান আসাদুজ্জামান। তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত আছেন।
পদক পাবার বিষয়ে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, "বাবা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ঘটনাটি সত্য। তবে জীবদ্দশায় বাবাকে ভালো মানুষ হিসেবে জেনেছি। তিনি উদার মানুষ ছিলেন। মানুষকে ভালোবাসতেন। আমি তার সন্তান হিসেবে তার রচিত গান-কবিতাগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। তারই স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্র। এটি সারা মাগুরার মানুষের জন্যে গৌরবের।"
তবে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আমির হামজার কোনো লেখা পাওয়া যায়নি বলে জানান আসাদুজ্জামান।