৬০ বছরে আইসিডিডিআর,বি-তে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী
মহাখালীতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-তে গত তিন দিন ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ১২০০ এর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে এখানে, যা হাসপাতালটির ৬০ বছরের দৈনিক ভর্তি রোগীর রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
বুধবার ২৪ ঘন্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ২৩৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ১৬ মার্চ থেকে গত ৮দিনে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৩৮৫ জন।
আইসিডিডিআর,বির কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই প্রাপ্তবয়স্ক। শনির আখরা, কদমতলী, দক্ষিণখানের রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে মোহাম্মদপুর, বাড্ডা ও মিরপুর থেকেও কিছু রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালটিতে।
রোগীর সংখ্যা হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ রোগীদের থাকার জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করেছে। রোগীর চাপ কমে আসার কোনো লক্ষণ না থাকায় আরও একটি তাঁবু টানিয়ে হাসপাতাল বড় করার কাজ চলছে। আগামীকাল থেকে নতুন তাঁবুতে রোগী ভর্তি করা হতে পারে।
হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানায়, নির্দিষ্ট কিছু পকেট এরিয়া থেকে ডায়রিয়া রোগী আসছে। সেসব এলাকায় পানির লাইনে কোনো সমস্যা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তারা।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে বাইরের খাবার না খাওয়া ও পানি ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এবিএম আব্দুল্লাহ।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তীব্র গরমে মানুষ বাইরে শরবত, আখের রস খাচ্ছে। বাড়িতেও পানি ফুটিয়ে খাচ্ছেনা অনেকেই। এছাড়া কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় স্কুল কলেজ সবকিছু খুলে যাওয়ায় মানু্ষ বাইরে যাচ্ছে বেশি এবং খোলা খাবার খাচ্ছে। এসব কারণে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে বাইরের খাবার খাওয়া যাবেনা। পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ঘরেও বাসি খাবার খাওয়া যাবেনা। ঘরের খাবারও স্বাস্থ্যকর হতে হবে। খাবার দীর্ঘক্ষণ বাইরে রেখে তারপর ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবেনা।"
"যদি কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন তাহলে স্যালাইন ও ডাবের পানি খেতে হবে। তা না হলে ডিহাইড্রেশনের কারণে কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে ডায়রিয়া হলে নিজে নিজে কোন ওষুধ খাওয়া যাবেনা। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে," উল্লেখ করেন তিনি।
তবে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ এখনো কম। আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশেরও কম। শিশু হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগী কম ভর্তি হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "শিশুদের ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রভাব আমাদের হাসপতালে এখনো কম। গত ২৪ ঘন্টায় ১০ জন শিশু ডায়ারিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০০ এর নিচে। তবে রোগী বাড়লে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য সেল তৈরি করে চিকিৎসা দেওয়া হবে।"
আইসিডিডিআর,বির তথ্য বলছে, এর আগে ২০১৮ সালে ডায়রিয়ার প্রকোপের সময় গড়ে ১০০০ এর মতো রোগী ভর্তি ছিল। সে সময় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি ছিলো ১০৪৭ জন। এছাড়া এর আগে ২০০৭ সালে বন্যার সময় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়। তখনো ভর্তি রোগী এক হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো।
স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডাঃ নাজমুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "গরমের কারণে এই সিজনে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে ডায়রিয়া রোগী বুদ্ধি পায়। ঢাকার কিছু পকেট এরিয়ার ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে অন্যান্য এলাকায়ও ডায়রিয়া রোগী বাড়লে তাদের সেবা দিতে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন, কলেরা শনাক্তকরণ কিটসহ সব উপকরণ পর্যাপ্ত আছে।"
"ডায়রিয়া প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সতর্কতা জরুরি," বলেন তিনি।