গ্যাস রেশনিং বন্ধের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ ব্যবসায়ীদের
কোভিড পরিবর্তী সময়ে শিল্প কারখানাগুলো যখন পূর্ণোদ্যমে উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছে, তখন শিল্প-কারখানায় চার ঘন্টা গ্যাস বন্ধে পেট্রোবাংলা যে সার্কুলার ইস্যু করেছে, তাতে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
তারা বলছেন, গ্যাস রেশনিং করা হলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ সংকটের পাশাপাশি রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করছে কোম্পানিগুলো।
এছাড়া, গ্লাস, সিরামিক ও অন্যান্য শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করে ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছেন তারা।
১১ এপ্রিল জারি করা একটি সার্কুলারে, রমজান মাসে সংকটের মধ্যে ১৫ দিনের জন্য প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারখানাগুলোকে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে বলে পেট্রোবাংলা।
রাধুনী, রুচি ও চাষী ব্রান্ডের জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য- চাল, গুড়া মসলা, স্ন্যাকস, নুডলস উৎপাদন করে দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহকারী স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠান।
চিঠিতে তিনি বলেন, "রমজান মাসে ভোক্তার চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এসব পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমাদের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।"
বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
এসিআই সল্ট লিমেটেড এর বিজনেস ডিরেক্টর মো. কুমুল হাসান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে লেখা চিঠিতে বলেন, "লবণ উৎপাদন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং আমরা যদি চার ঘণ্টার জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখি তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। কারণ পুনরায় উৎপাদন চালু করার পর লবণ পেতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা সময় লাগে।"
"ফলে আমরা প্রতিদিন মাত্র ১২ ঘণ্টা উৎপাদন পাব। অন্যদিকে, এটি মানুষের ব্যবহারের জন্য একটি অপরিহার্য পণ্য। গ্যাস ব্যবহার ছাড়া, আমরা এই পণ্য উৎপাদন করতে পারব না। এতে দেশে ভোজ্য লবণের ঘাটতি দেখা দেবে," যোগ করেন তিনি।
একটি পৃথক চিঠিতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মহাসচিব এবং সিইও বাণিজ্য সচিবকে বলেন, এমসিসিআই দৃঢ়ভাবে মনে করে, ক্রমাগত প্রক্রিয়াজাত শিল্প যেমন গ্লাস, সিরামিকসহ অন্যান্য শিল্পে এই ধরনের গ্যাস রেশনিং তাদের উৎপাদনের পাশাপাশি তাদের সম্পূর্ণ কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটাবে।
"এছাড়াও দেশের শিল্প এলাকাগুলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতিতে ভুগছে। বেশিরভাগ কারখানাও এতদিন ধরে মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছে," যোগ করেন তিনি।
সদস্যদের পক্ষ থেকে এমসিসিআই পেট্রোবাংলার জারি করা সার্কুলারে হস্তক্ষেপ কামনা করে, এবং ব্যবসা সহজ ও কম ব্যয়বহুল করার জন্য উৎপাদনশীল শিল্পগুলোতে গ্যাস সরবরাহ রেশনিং এর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানায়।
দেশের লবণ শিল্প মালিকরা বলেন, বর্তমানে কনফিডেন্স, মোল্লা, ফ্রেশ, এসিআইসহ মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করে। এ পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করতে হলে মেশিন ২৪ ঘণ্টা সচল রাখতে হয়। কোনো কারণে তা বন্ধ করতে হলে তার ৫-৬ ঘণ্টা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। তাই গ্যাস রেশনিং এর কারণে চার ঘন্টা বন্ধ রাখতে হলে কার্যত উৎপাদন প্রক্রিয়া ৯-১০ ঘন্টা বন্ধ রাখতে হয়।
দেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক মো. কামরুজ্জামান কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের কিছু এসেনশিয়াল কমোডিটি উৎপাদনের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ না করার জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছি। সেগুলোতে এখনো গ্যাস বন্ধ হয়নি। গ্যাস বন্ধ করা হলে প্রডাকশন ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।"
টিকে গ্রুপের ডিরেক্টর সাইফুল আতহার তাসলিম টিবিএসকে বলেন, "আমরা কমোডিটি পণ্যের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার জন্য গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। আমাদেরকে গ্যাস ব্যবহার করে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যে কারণে আমরা কোন সমস্যায় পড়িনি।"
তবে রোজার মধ্যে যদি দিনের বেলা উৎপাদন চার ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে কমোডিটির উৎপাদন ব্যপকভাবে কমে যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী কন্টিনিউয়াস প্রসেসড ইন্ডাস্ট্রি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ না করার অনুরোধ জানিয়ে শিগগিরই জ্বালানী মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলাকে চিঠি পাঠানো হবে।