মহামারির পর শ্রেণিকক্ষে ফিরে হতবিহ্বল শিক্ষার্থীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ বাংলা বর্ণমালা পড়তে পারে না। ইংরেজিতেও তথৈবচ অবস্থা। রাজধানী ঢাকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইসলামের অবস্থা আরও করুণ—সহপাঠীদের নামও মনে নেই তার।
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছর শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছিল শিশুরা। ফলে যা শিখেছিল, তা হারিয়ে গেছে তাদের মস্তিষ্ক থেকে।
দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায়—বিশ্বে আর কোনো দেশের স্কুল সম্ভবত এরচেয়ে বেশি দিন বন্ধ ছিল না—শ্রেণিকক্ষের আচরণও বদলে গেছে। শিক্ষকেরা লক্ষ করেছেন, পাঠে এখন শিশুদের মনোযোগ কম। অল্পতেই তারা অস্থির হয়ে ওঠে। এমনকি স্কুলেও সময় কাটায় কম। অনেকেই এখন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর চাইতে মোবাইল ফোনে গেম খেলতেই বেশি পছন্দ করে।
বর্তমানে কুমিল্লার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাত। দু-বছর অনলাইন ক্লাস হয়েছে তার। এ সময় সে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের ক্লাস ঠিকমতো বুঝতে পারেনি। এদিকে বরিশালের এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে পাঠ্যবই ফেলে ফেসবুকে সময় কাটাতে দেখে উদ্বিগ্ন তার মা।
শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকায় একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে—তার একটি 'লার্নিং লস'। অন্যান্য ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে আচরণগত পরিবর্তন ও বিষণ্নতা। শেখার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য শিক্ষাবিদেরা নিবিড় পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলছেন। অন্যদিকে সোশ্যাল সাইকোলজিস্টরা বলছেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সেলিং জরুরি।
ভীতিকর পরিস্থিতি
ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদকেরা। কথা বলেছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে। স্কুলের ছুটি প্রলম্বিত হওয়ার পর থেকে বিশেষজ্ঞ ও বৈশ্বিক গবেষণা সংস্থাগুলি যে বিষয়ে সতর্ক করে আসছিল, অনেকটা সেরকম ফলাফলই দেখেছেন টিবিএসের প্রতিবেদকেরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নূর মোহাম্মদ। দশ-বিশ সেকেন্ড একটি বাংলা বাক্যের দিকে তাকিয়ে থেকে সে জানাল, 'পড়তে পারছি না। বাংলা বর্ণমালা চিনতে আমার কষ্ট হয়।' ২০২০ সালে বাংলাদেশে মহামারি আঘাত হানার সময় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল নূর মোহাম্মদ।
নূর মোহাম্মদের ক্লাসের মোট ৭৮ জনের কেউই ঠিকমতো বাংলা বা ইংরেজি পড়তে বা লিখতে পারে না।
মনোযোগের ঘাটতির কারণে লার্নিং লস আরও বেড়ে গেছে। মহামারিকালে লার্নিং লস কেবল বেড়েছেই।
ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন-এর (সিএএমপিই) তথ্যমতে, ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী 'স্ক্রিন-টাইম', অর্থাৎ মোবাইল গেমের প্রতি আসক্ত। তাদের মধ্যে সাড়ে ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ৫ ঘণ্টার বেশি এবং ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ২ ঘণ্টা পর্যন্ত মোবাইল গেম খেলে সময় কাটায়।
ইউনিসেফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে লার্নিং লসের ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ ১০ বছর বয়সি শিশু সাধারণ লেখা পড়তে বা বুঝতে পারে না। মহামারির আগে এই বয়সি শিশুর মধ্যে এ হার ছিল ৫৩ শতাংশ।
উন্নয়নশীল বিশ্বে সাক্ষরতার হার ও লিঙ্গ সমতা বাড়ানো নিয়ে কাজ করে অলাভজনক সংস্থা রুম টু রিড। এ সংস্থাও বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রুম টু রিড বলছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতি মিনিটে অন্তত ৬০টি শব্দ পড়তে পারতে হয়। কিন্তু ওই সময়ে বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী একটি শব্দও পড়তে পারেনি।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অভ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনা মহামারির কারণে প্রায় ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী লার্নিং লসে পড়েছে।
আশুগঞ্জ পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হাবিবা সিদ্দিককে তার শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে করোনা মহামারির সময় শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে শিখতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ খুবই খারাপ। আমরা ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু কাজটা খুব কঠিন।'
তিনি আরও বলেন, 'ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। অভিভাবকরাও সচেতন নন। তারা তাদের বাচ্চাদের স্কুলের পড়াশোনায় সাহায্য করেন না।'
অন্যান্য স্কুলও একই সমস্যায় ভুগছে।
রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহনাজ পারভিন টিবিএসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের লার্নিং লস কতটা হয়েছে, তা বোঝানোর ভাষা তাদের নেই। তিনি বলেন, 'স্কুল বন্ধ থাকার সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাই করেনি।'
স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা রিনা পারভিন বলেন, তারা লার্নিং লস কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ১৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র পাঁচজন; তাই কাজটা দুরূহ।
স্কুলটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার মাত্র ৬১ শতাংশে নেমে এসেছে। তাছাড়া যতটা হওয়ার কথা ছিল, শিক্ষার্থীদের পরিপক্কতার স্তর তার চেয়ে অনেক কম। ফলে তারা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতেও জানে না বলে মন্তব্য করেন রিনা।
শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সমস্যার শিকার হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলার অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নিশাত।
মহামারির শুরুতে যখন স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, নিশাত তখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওই সময় সে সবে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতের জটিল বিষয় পড়তে শুরু করেছিল।
নিশাত জানায়, 'আমি অনলাইনে ক্লাস করতাম, কিন্তু ঠিকমতো বুঝতে পারতাম না। এখন আমি গুরুতর লার্নিং লসে ভুগছি।
'এই বিষয়গুলো আমি বুঝি না। জানি না আমি কী করব।'
দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকেরাও।
তাহসিন আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, 'আমার ছেলে স্কুলে যেতে চায় না। সে সারাক্ষণই মোবাইলে বিভিন্ন গেম খেলে, নইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে।'
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের আরও পাঁচ জেলার টিবিএস প্রতিনিধিরাও দেখেছেন যে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জিলা স্কুলের এক শ্রেণি-শিক্ষক বলেন, 'বর্তমান উপস্থিতির হার নিয়ে আমি হতাশ। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ফেসবুক বা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। লেখাপড়ার প্রতি তাদের কোনো মনোযোগ নেই।'
এহেন পরিস্থিতিতে একটি জরুরি পুনরুদ্ধার ও প্রতিকারমূলক পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সিএএমপিই বলছে, একটি দুই বছরের শিক্ষণ-পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতে ও শিক্ষার জরুরি ব্যবস্থা হিসাবে এর বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।
সিএএমপিইর ডেপুটি ডিরেক্টর কে এম এনামুল হক টিবিএসকে জানান, তারা লার্নিং লস নিয়ে একটি জরিপ চালাচ্ছেন।
তাদের ধারণা, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী লার্নিং লসে পড়েছে। এনামুল হক বলেন, অবিলম্বে এই লার্নিং লস পোষানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে শিক্ষার্থীরা কিছু না শিখেই বেড়ে উঠবে। ফলে মারাত্মক প্রজন্মগত সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, লার্নিং লস ছাড়াও শিক্ষার্থীরা নজিরবিহীন মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে।
বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ডা. মেহতাব খানম টিবিএসকে বলেন, মহামারির কারণে মানুষ কর্মসংস্থান বা পুঁজি হারিয়ে আগের চেয়ে দরিদ্র হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের জীবন সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে। ফলে তাদের অনেকেই এখন বিষণ্ণতায় ভুগছে।
'শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করানো একান্ত দরকার হলেও দেশে মনোবিজ্ঞানী (সাইকোলজিস্ট) ও মনোব্যাধির চিকিৎসকের (সাইকিয়াট্রিস্ট) ঘাটতি রয়েছে। কোভিড সংক্রমণের কারণে এখন নতুন প্রশিক্ষণ দেওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি কোনো আশার আলো দেখছি না,' বলেন তিনি।
সর্বোপরি, অর্থনৈতিক প্রভাবও পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।
২০২১ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় এমন এক শিক্ষা সংকট তৈরি হচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভবিষ্যতে এক লাখ কোটি মার্কিন ডলারের সমান উপার্জন হারাতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
মহামারি-পরবর্তী বিশ্বে শিক্ষা খাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে কাজ করছে গ্লোবাল এডুকেশন অ্যাডভাইজরি প্যানেল। এই পরামর্শক প্যানেলের কো-চেয়ারপারসন ও অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেছেন, পাঠক্রম (সিলেবাস) সম্পন্ন করার চেয়ে সকল শিশু যাতে সমানভাবে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায় সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।
টিবিএসের সাথে সাম্প্রতিক এক আলোচনায় তিনি বলেন, 'ক্লাস থ্রির একটি বাচ্চার শিক্ষাগ্রহণ যদি ক্লাস ওয়ানের সমান হয়, তবুও তাকে যদি ক্লাস ফাইভে প্রমোশন দেওয়া হয়—তাহলে ওই সিলেবাস থেকে শেখা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ তারা হয়তো ঠিকভাবে পড়তেই শেখেনি; আপনি কীভাবে তাদের ইতিহাস বা সাধারণ জ্ঞান শেখাতে পারবেন? সেটা যদি করা হয় তাহলে সেই বাচ্চাদের কোনো আশা নেই। তারা যেখানে ছিল সেখানেই থেকে যাবে। হয়তো নিরাশ হয়ে স্কুলে আসা ছেড়ে দেবে।'
অভিজিৎ ব্যানার্জির এই পর্যবেক্ষণের সাযুজ্য পাওয়া গেছে গত মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করা ৭৬ শতাংশ শিশুর ন্যূনতম পড়ার দক্ষতাও থাকবে না।
এই বাস্তবতায় সব শিশুকে সমান দক্ষতার পর্যায়ে আনার প্রতি তাগিদ দিয়ে অভিজিৎ বলেছেন, এজন্য শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রতিটি শিশুর দুর্বলতা খুঁজে বের করে, সেগুলোর উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, 'শিশুদের সমান শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ কীভাবে দেওয়া যায়—তা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, সরকারকে অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে এবং শেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। তিনি বলেন, 'আমি জানি না সরকার কেন শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে চায় না।'
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, সরকারের উচিত গ্রেড অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিতে যে প্রাথমিক দক্ষতা থাকা উচিত প্রতিটি স্কুলে দ্রুত তার মূল্যায়ন শুরু করা।
মান সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে এখন নিজের পায়েই দাঁড়াতে হবে, নাহলে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষানীতি প্রণয়নের সুযোগও খুবই কম থাকবে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান শেখার ঘাটতি একটি পুরো প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারি উদ্যোগ
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মধ্যেই মহামারির কারণে স্কুল বন্ধের সময় শেখার ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে একটি কৌশল তৈরি করেছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে যে ক্ষতি পুনরুদ্ধার করা দরকার, তা পরিমাপে কোনো জরিপ করা হয়নি।
মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের লার্নিং লস প্রশমনে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কৌশলটি তৈরি করে বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটির আওতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান, নৈতিকতা ও দায়িত্ব, আচরণ, দেশপ্রেম, সহনশীলতা, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, পরিবেশ সচেতনতা, গণতান্ত্রিক মনোভাব, আত্মবিশ্বাস, লিঙ্গ সচেতনতাসহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ টিবিএসকে জানান, লার্নিং লসের পরিমাণ জানতে তারা একটি জরিপ চালাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, 'রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা উদ্যোগ নেব।'
উল্লেখ্য, সারা দেশে সাড়ে ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থীসহ দুই লাখের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
৩০ শতাংশের বেশি অনুপস্থিতি
সেফ ব্যাক টু স্কুল (এসবি২এস) জানিয়েছে, দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর মাধ্যমিক স্তরের ৫৭-৬৯ শতাংশ ও প্রাথমিক স্তরের ৬৫- ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে।
১৭ জেলার ৩২৮টি স্কুলে ১৬০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা জরিপটি পরিচালনা করে।
জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শিখতে ও পাঠ বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া অন্যদের সাথে সামাজিক মেলামেশায়ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তারা।
জরিপটি শিক্ষার্থীদের উৎফুল্ল রাখতে এবং তাদের মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পোষাতে তাদের জন্য পরিপূরক ক্লাসের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জরিপে।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে টিবিএসের সিলেট প্রতিনিধি দেবাশীষ দেবু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সানা উল্লাহ সানু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আজিজুল সঞ্চয়, বরিশাল প্রতিনিধি জহির জুয়েল, বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম ও কুমিল্লা প্রতিনিধি তৈয়বুর রহমান সোহেল সহায়তা করেছেন।]