ট্রেনের টিকিটের জন্য ২৬ ঘণ্টা অপেক্ষা, তবুও খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে
পবিত্র ইদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়,দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করছেন যাত্রীরা। চাহিদা অনুযায়ী টিকিট সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন রেলের কর্মীরা।
অনলাইনে টিকেট না পাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে অনেকেই রাত ১০টায় এসে লাইনে দাঁড়ান স্টেশনে। এই লাইন কাউন্টার থেকে স্টেশনের বাইরে পর্যন্ত চলে গেছে।
অনলাইনে টিকিট কিনতে না পারার অভিযোগ টিকিট প্রত্যাশীদের। অনেকেই সার্ভারে ঢুকতে পারছেন না। দুয়েকজন ঢুকতে পারলেও টিকিট পাচ্ছেন না। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টাকা কেটে নেওয়ার পরেও টিকিট দেয়নি- এমন অভিযোগ অনেকের।
রেলের টিকেট প্রত্যাশী রওশন হোসেন, যাবেন রংপুর। গত ২৪ ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়েও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এখনো টিকিট পাননি।
তিনি বলেন, "অনলাইনে বহু চেষ্টা করেছি টিকিটের জন্য, কিন্ত সার্ভারে সমস্যা দেখায়, বিকাশ থেকে পেমেন্ট নেয় না, আজকে আর সার্ভারে ঢুকাই যাচ্ছে না।
নাজমা আক্তার গত বৃহস্প্রতিবার রাত ১০টায় লাইনে দাঁড়ান গাইবান্ধার টিকিটের জন্য। কিন্তু পরদিন দুপুর ১২টায় কাউন্টার থেকে জানানো হয়, গাইবান্ধার টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এদিকে অনলাইনে তার পেমেন্ট নিলেও টিকিট পাননি।
নাজমা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এতো তাড়াতাড়ি টিকেট শেষ হয়ে গেছে মনে হয় না। এদিকে, অনলাইনে টিকিট-টাকা কোনোটাই পাচ্ছি না।" "আমাদের টিকিট না দিয়ে কাউন্টারের ভেতর থেকে অনেকেই টিকিট নিয়ে যাচ্ছে অন্যায়ভাবে, কালোবাজারিরা টিকিট নিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমি ২৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাইনি।
আগামী ২ মে ঈদুল ফিতর ধরে নিয়ে ১ মে পর্যন্ত ইদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
আগামী ২৬ তারিখের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে আজ। আর তা সংগ্রহ করতে গিয়েই ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এবারের ইদে ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ মে। সেদিন দেওয়া হবে ৫ মে-র টিকিট।
আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এসব টিকিটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি হওয়ার কথা।
তবে অনেকেই অভিযোগ করেন, টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে, যার কারণে কাউন্টার স্লো করে দিয়েছে কালোবাজারে বিক্রির জন্য।
মোহাম্মদ এনামুল হক বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন, দুপুর ১২টার দিকে পাবনা চাটমোহর যাওয়ার টিকিট পেয়েছেন তিনি।
এছাড়া, নারীদের জন্য একটি মাত্র কাউন্টার হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
এবার যাত্রীদের ভিড় এড়াতে রাজধানী কমলাপুর রেল স্টেশন, ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন, তেজগাঁও স্টেশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন)-এ ৫টি স্থানে টিকেট বিক্রি হচ্ছে।
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট মিলবে, তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ ও
জামালপুর রুটের সব আন্তঃনগর ট্রেন এবং দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালের টিকিট বিক্রি হবে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগমী সব আন্তঃনগর ট্রেন টিকিট পাওয়া যাবে।
গত ১৩ এপিল রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, এবার ইন্টারনেট ও অ্যাপের মাধ্যমে ঈদের অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাবে সকাল ৮টা থেকে। কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে। ঈদের অগ্রিম টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না, সেগুলো শুধুমাত্র স্টেশন কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগের ৭ দিন, অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে না। ঈদের পরে ডে অফ কার্যকর করা হবে।
সাপ্তাহিক বিরতি না রাখায় অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষভাবে পরিচালনা করতে পারবে রেলওয়ে। ঈদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।
রেল মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ঈদের আগে ২৩ এপ্রিল বিক্রি হবে পাঁচ দিন পরের, অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল যাত্রার টিকেট। একইভাবে ২৪ এপ্রিল মিলবে ২৮ এপ্রিলের, ২৫ এপ্রিল মিলবে ২৯ এপ্রিলের, ২৬ এপ্রিল মিলবে ৩০ এপ্রিলের এবং ২৭ এপ্রিল ১ মের টিকেট। রোজা ৩০টি হলে, অর্থাৎ ৩ মে ঈদ হলে ২৮ এপ্রিল বিক্রি হবে ২ মের ট্রেনের টিকেট। ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৫ মে। সেদিনের ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি হবে ১ মে।
এবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে রেলের। এর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও চাঁদপুর স্পেশাল-২ ট্রেন দুটি চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চলবে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত। এছাড়া ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল একই সময়ে চলাচল করবে।
ঢাকা-খুলনা রুটে খুলনায় স্পেশাল ট্রেনটি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের অতিরিক্ত রেক দিয়ে চলাচল করবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত।
এছাড়া ঈদের দিন ভৈরব বাজার ও কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-১ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়ায় স্পেশাল-২ চলাচল করবে।
হানিফ পরিবহনের কমলাপুর কাউন্টার ইনচার্জ শাহ নেওয়াজ আরিফ বলেন, "গত তিন দিন থেকে ঈদ যাত্রীদের চাপ দ্বিগুণ হয়ে গেছে, ২৬ তারিখের পর থেকে তা ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে মনে হচ্ছে।"
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাদিউজ্জামান বলেন, "আমরা (বুয়েট) গবেষণা করে দেখেছি, ২০১৯-১৯ সালে ১ কোটি ১৫ লাখ মাানুষ ঈদে ঢাকা ছেড়ে যায়। কিন্ত করোনার কারণে গত চার ঈদে যায় ৬০ লাখ করে, তবে এবার ঈদে তা আবার দ্বিগুণ হয়ে যাবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের গবেষণা অনুযায়ী, এবার ঈদের আগের চার দিন প্রতিদিন ৩০ লাখ করে মানুষ ঢাকা ছাড়বে। কিন্তু রেল,বাস, নৌ-যান মিলে সক্ষমতা আছে ১৩-১৪ লাখ যাত্রী পরিবহন করার, ১৬ লাখ মাানুষের জন্য কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। এবার ঈদে পরিবহন ব্যবস্থা কোমায় চলে যেতে পারে।"