এখনো জমেনি ফুটপাতের ঈদের কেনাকাটা
ফুটপাত ও সড়কে থাকা দোকানপাটে এবার এখনও জমে উঠেনি ঈদের কেনাকাটা।
ফুটপাতের দোকান ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভার এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কাছে টাকা কম থাকায় দোকানে গ্রাহকের উপস্থিতিও কম।
শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট, নিউমার্কেট ও কারওয়ান বাজার এলাকার ফুটপাতের দোকান মালিকরা বলেছেন, তারা আশায় আছেন রমজানের শেষ ১০ দিন বিক্রি বাড়বে।
আব্দুল মালেক ১৮ বছর ধরে নিউমার্কেট এলকায় ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন। ২০ রমজান পার হলেও এখনও তেমন বিক্রি না হওয়ায় হতাশ তিনি।
তিনি বলেন, "করোনার আগে ১৫ রমজান থেকেই আমাদের বিক্রি ভালো হতো। প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন তার চার ভাগের এক ভাগ হচ্ছে না।"
তিনি টিবিএস-কে বলেন, "মানুষের আয় কমে গেছে। আগে যিনি পরিবারের সদস্যদের জন্য ৫ থেকে ৭টি পোশাক কিনতেন এখন তিনি কেনেন ২-৩ টি। তবে আশা করছি সামনে বিক্রি বাড়বে।"
সব বয়সী নারী-পুরুষের জন্য রং-বেরঙের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যায় ফুটপাতে। সারি সারি এসব দোকান থেকে প্রতিনিয়তই পছন্দমতো জামা-কাপড় ও শার্ট রাখা হয়েছে। এখানে শার্ট বিক্রি হচ্ছে ২০০- ২৬০ টাকায়। শিশুদের ফ্রক, টি-শার্ট ছাড়াও বাহারী ডিজাইন ও নানা রঙের পোশাক পাওয়া যায় যেগুলোর দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক খুঁজে নেন এই ফুটপাত থেকে।
নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত থেকে আনিসুর রহমান ছেলের জন্য জুতা কিনেছেন ৪০০ টাকা দিয়ে। আর মেয়ের জন্য একটি থ্রি-পিস নিয়েছেন ৬০০ টাকা দিয়ে । টিবিএস-কে তিনি বলেন, এবার নিজের জন্য ও স্ত্রীর জন্য কোন পোশাক কিনছেন না।
আনিসুর রহমান বলেন, "১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। যে হারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে আয় তো সেভাবে বাড়ছে না।"
মোহম্মদ আনিস ১৫ বছর ধরে কারওয়ান বাজারের বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন ভবনের পাশের ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেন। টিবিএস-কে কে আনিস বলেন, "গত রমজানেও এই সময় প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো, কিন্তু এখন তার অর্ধেকও হয় না। আশা করি লোকজন গ্রামে বাড়ি যাওয়ার আগে কেনাকাটা করবে, তখন বিক্রি বাড়বে।"
শুক্রবার বিকেলে কালবৈশাখী ঝড় সহ বৃষ্টি হয় রাজধানীতে, এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।
বৃষ্টির জন্য নিউমার্কেট এলকার ফুটপাতের দোকানগুলোর পণ্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন বিক্রিতারা।
মোহম্মদ টিপু নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে জুতা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, "এমনিতেই বিক্রি কম তার উপর বৃষ্টি নেমেছে। সামনে এমন বৃষ্টি হলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হবো।"
বিকাল ৫ টার দিকে বৃষ্টি থামার পর নিউমার্কেট ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, ধাক্কাধাক্কি করে কেনাকাটা করছে ক্রেতারা।
বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, "আস্তে আস্তে জমে উঠছে কেনা কাটা। সামনে দিন যত যাবে বিক্রি তত বাড়বে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে দেশের বাজারে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক রকম বেশি, ঈদের কেনাকাটায়ও এর প্রভাব পড়েছে। নিত্যপণ্যের কেনার খরচ বাঁচাতে মানুষ ঈদের কেনাকাটায় খরচ কমিয়ে দিচ্ছে।"
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারি চলাকালীন দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সাত কোটির বেশি।