দেশে এখন ড্রাগন ফল চাষ করা যাবে সারা বছর!
এখন সারা বছর দেশে ড্রাগন ফলের চাষ করা যাবে! চট্টগ্রামের খুলশী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক চার বছর চেষ্টার পর শীতকালে গ্রীষ্মকালীন ফলটি ফলাতে সক্ষম হন।
সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসে দিনের আলো বেশি থাকায়, দিন বড় হওয়ায় ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়।
এখন দিনের আলোর বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক বাল্ব ব্যবহার করে সারাবছর ফলটি চাষ করা যাবে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম হারুনুর রশিদ দ্য বিজনসে স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শীতের মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দিন ছোট থাকে। এ সময়ে ড্রাগন ফল চাষ হয় না। আমরা এ সময়ে ড্রাগন ফলের বাগানে ১০০ ওয়াডের টাংস্টেন ফিলামেন্ট বাল্বে সন্ধ্যার পর ছয় ঘন্টা আলো দিয়ে চাষ করি।
"বাল্বগুলো খুটির উপর এমনভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, যেন চারদিকে থাকা গাছে আলো ছড়িয়ে পড়ে। ড্রাগন চাষে দিনের আলোর প্রয়োজন হয়", বলেন তিনি।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়। তবে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভিন্নতা রয়েছে।
২০১৭ সালে থেকে গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. গোলাম আজম ও এসএম কামরুল হাসান চৌধুরীর সমন্বয়ে গবেষণা দলটি অ-মৌসুমে (অফ সিজনে) ড্রাগন ফল চাষের চেষ্টা করে আসছেন। শুরু পাঁচ রকমের লাইট ব্যবহার করা হয়েছিল। ফ্লাশ লাইট, বিভিন্ন পাওয়ারের এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়া ৬, ৮ ও ১০ ঘন্টা লাইটের আলো দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এখানে চাষ করা হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি ড্রাগন ফল-১ জাতের ড্রাগন ফল।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. গোলাম আজম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "৩০০ বর্গফুট জমিতে বাগান করে প্রায় ২০০ মতো ড্রাগন গাছ লাগানো হয়েছিল। মোট ৪৯টি খুটির উপর গাছগুলো লাগানো হয়েছে। প্রথমে বিভিন্ন ধরণের লাইট ব্যবহার করা হয়েছিল। এলইডি লাইটের মধ্যে ২০, ২৫, ৩০, ৩৫ ওয়াড ব্যবহার করা হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ১০০ ওয়াডের টাংস্টেন ফিলামেন্ট বাল্ব ব্যবহার করে কার্যকারিতা পাওয়া গেছে।"
"শীত মৌসুমে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ছয় ঘন্টা আলো দেওয়ার ২০-৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসে। এরপর আরো ১৫-২৫ দিন পর গাছে ফল আসে", বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "এই পদ্ধতি এখন উদ্যোক্তা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি প্রচার করছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন আগ্রহী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।"
গবেষক দলের প্রধান ড. এএসএম হারুনুর রশিদ বলেন, সাধারণত অফ সিজনের ড্রাগন ফল পাওয়া যায় না। কিছু সুপারশপে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি এক হাজার টাকারও বেশি। আর সিজনে এর দাম থাকে ২৫০-৩০০ টাকা। এই পদ্ধতিতে চাষ করা গেলে সারা বছর ড্রাগন ফল সহজলভ্য হবে। ড্রাগন ফলের বাজার দরও কমবে।"
"অফ সিজনে চাষে প্রতি খুটিতে অর্থাৎ চারটি গাছ থেকে ১২-১৪ কেজি ফল আসে। স্বাভাবিক সময়ে ২০ কেজি ফল আসে। তবে অফ-সিজনে ফলের আকার একটি বড় থাকে", বলেন তিনি।
হারুনুর রশিদ বলেন, "আমরা বেনিফিটস কস্ট ফ্যাক্টর হিসেবও করেছি। প্রতি এক টাকা খরচের বিপরীতে ২.৪১ টাকা আসবে। এটি লাভজনক। যারা বাড়ির ছাদে ছোট পরিসরে ড্রাগন ফল বাগান করছেন, তারাও এ পদ্ধতি চাষ করে সুফল পেতে পারেন।"