জব্বারের বলীখেলার চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী
জব্বারের বলীখেলার ১১৩তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কক্সবাজারের জীবন বলী। তিন দফায় প্রায় ৪০ মিনিটের খেলায় কুমিল্লার হোমনার শাহাজালাল বলীকে তিন পয়েন্টে হারিয়ে জীবন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
আজ সোমবার লালদীঘি চত্বরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে রেফারি আবদুল মালেক জীবনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন।
এর আগে জব্বারের বলীখেলার ১০৯তম আসর, সাতকানিয়ায় মক্কার বলীখেলা এবং পটিয়ার বলীখেলায়ও চ্যাম্পিয়ন হন জীবন বলী। তার পুরো নাম তারেকুল ইসলাম। চকরিয়ায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী জীবন সারাদেশে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় বলী ধরে বেড়ান।
চ্যাম্পিয়ন হয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত জীবন বলী। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমি অত্যন্ত আনন্দিত। দুই বছর পর প্রাণের মেলায় ফিরেই চ্যাম্পিয়ান হলাম। এই খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা স্বপ্নের মতো।'
এর আগে বলীখেলা এবং মেলায় হাজার হাজার লোকসমাগম ঘটে। তবে গতকাল সবার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বলীখেলার মঞ্চ। লালদিঘীর চৌরাস্তার মাঝখানে চৌকির ওপর উঁচু একটি রিং বানানো হয়। এবারের বলীখেলায় মোট ৭২ জন বলী অংশ নেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী বলী ছিলেন।
বলীখেলা পরিচালনা করেন সাবেক কমিশনার আবদুল মালেকসহ চারজন। এবারের চ্যাম্পিয়ন বলীকে দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা ও ট্রফি। রানারআপ বলীকে দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপের বাইরে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকারীকে যথাক্রমে ছয় ও পাঁচ হাজার টাকায় পুরস্কৃত করা হয়।
প্রথম রাউন্ডের পর চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে অংশ নেন আটজন বলী। প্রথম সেমিফাইনালে মোকাবিলা করেন তারেকুল ইসলাম জীবন ও মমিন। এতে জীবন জয় পেয়ে ফাইনালে ওঠেন। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সৃজন চাকমা ও শাহাজালাল বলী মোকাবেলা করেন। এতে জয় পেয়ে শাহাজালাল বলী ফাইনালে ওঠেন।
ফাইনালের দ্বৈরথটি হয় প্রায় ৪০ মিনিটের। শাহজালালকে ফেলতে পারেননি জীবন। তবে কৌশলগত কারণে তিন পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় জীবনকে বিজয়ী করা হয়। এর আগে তিন দফা খেলা অনুষ্ঠিত হলেও কেউ কাউকে হারাতে পারেনি।
এদিকে শাহাজালাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে জীবন ফেলতে পারেনি।'
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান রেফারি আবদুল মালেক বলেন, 'বলীখেলায় পা ধরতে পারে না। মাথা দিয়ে মারতে পারে না। এই দুটি অপরাধ করার কারণে দুইজনকে বারবার সাবধান করা হয়। কিন্তু কৌশলগত পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় জীবনকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
১৯০৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে লড়তে দেশের তরুণ যুবকদের শারীরিকভাবে প্রস্তুত করতে এই বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার। শত বছর পেরিয়ে বর্তমানে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী লোকজ উৎসবেই শুধু পরিণত হয়নি এই খেলা, ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসেও।