বাগেরহাট উপকূলে তীব্র পানি সংকট, মিলছে না স্থায়ী সমাধান
প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে তীব্র পানি সংকটে পড়েছেন বাগেরহাটের উপকূলের মানুষ। জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে সুপেয় পানি সরবরাহ শুরু করলেও তা যথেষ্ট না, শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ীভাবে সুপেয় পানির সমাধান চান এলাকাবাসী।
প্রচন্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারনে পানির উৎসগুলো (পুকুর, দিঘী, খাল) শুকিয়ে যাওয়ায় শুধু খাবার পানিই নয়, রান্নার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারের পর জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য যৌথ উদ্যোগে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এই পানি সরবরাহও এলাকার মানুষের জন্য যথেষ্ট নয়।
মঙ্গলবার শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম ধানসাগর এলাকায় শত শত নারী–পুরুষকে হাড়ি, কলস ও ড্রাম নিয়ে প্রচন্ড গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় সুপেয় পানির জন্য।
প্রতি ঘণ্টায় প্লান্ট থেকে ৭শ লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে, পানি সংকট থাকায় অন্যান্য বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে ফুটিয়ে ও বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানি পানের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলীএসএম মেহেদী হাসান বলেন, এলাকায় তীব্র সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে। তবে আরও বেশি পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে পারলে অনেক মানুষ উপকৃত হতো।
এমতাবস্থায় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদীর পাশের বাসিন্ধা আবজাল হাওলাদার বলেন, "এই এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এবছর প্রচন্ড গরমের কারনে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশে-পাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণ পানিতে গোসল রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যাথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা খুব সমস্যায় আছি।"
উপজেলার বান্ধাকাটা এলাকার গৃহবধু জিনিয়া বেগম বলেন, "মেশিনে পানি দিচ্ছে এ খবর পেয়ে ছুটে এলাম এক কলস নিতে। আমরা শুকনা মৌসুমে স্থায়ীভাবে সরকারের কাছে পানি ব্যবস্থার দাবি জানাই।"
পশ্চিম ধানসাগর গ্রামের আমিন চৌকিদার বলেন, "গাড়িতে করে পানি দিচ্ছে। দুই ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে পানি নিলাম। এই গরমের মধ্যে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ একটু খাবার পানির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।"
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, "শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবণাক্ততার কারনে অগভীর নলকূপ স্থাপন হয় না। প্রায় দেড় লাখ মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলোতে কোনো পানি নেই। ফলে মানুষের মাঝে খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে। বর্তমানে যে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে তাও অপ্রতুল।"
বাগেরহাটের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, "উপকূল জুড়ে তীব্র পানির সংকটের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বাগেরহাটের শরণখোলায় ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত পানির সংকট দূর না হবে ততোদিন এই কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।"