বৃষ্টির অভাবে হালদায় মাছের ডিম ছাড়া ব্যাহত হচ্ছে
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদায় টানা তিনদিন ধরে স্বল্প পরিমাণে নমুনা ডিম ছাড়ছে কার্প জাতীয় মা মাছ। ডিমের অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত পার করছেন হালদা পাড়ের জেলেরা, তবে আশানুরুপ বৃষ্টি না হওয়ায় মা মাছ পূর্ণমাত্রায় ডিম ছাড়ছে না।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে কার্প মাছের উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে।
তারা বলছেন, বৃষ্টি হলেই হালদায় কার্প মাছের ডিম ছাড়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
প্রতি বছরের চৈত্র (মার্চ-এপ্রিল) থেকে আষাঢ়ে (জুন-জুলাই) বজ্রসহ ভারি বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। এসময় পাহাড়ি ঢলের ফলে হালদা নদীর বাঁকগুলোতে পানি ঘোলা ও খরস্রোতা হয়ে ফেনাকারে প্রবাহিত হয়। তখন নদীর বাঁকে ভৌত-রাসায়নিক ফ্যাক্টরগুলো সৃষ্টি হলে ও তাপমাত্রা অনুকূলে ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমছে বৃষ্টিপাত, বাড়ছে তাপমাত্রা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে হালদা নদীতে বাড়ছে লবণাক্ততাও।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পূর্নিমা আর জোয়ারের কারণে শনিবার (১৪ মে) রাত থেকে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়া শুরু করেছে। রোববার মধ্যরাত থেকে সামান্য কিছুটা বেশি ডিম জেলেদের জালে আসছে। তবে এর সবই নমুনা ডিম।'
তিনি বলেন, 'পানির উষ্ণতা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি। এছাড়া বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে ভৌত-রাসায়নিক ফ্যাক্টরগুলো সৃষ্টি হচ্ছে না। মূলত এই দুই কারণে মা মাছ পূর্ণমাত্রায় ডিম ছাড়ছে না।
অপরিপক্ক পরিবেশে মা মাছ ডিম ছেড়ে দিলে সেই ডিম থেকে রেণু-পোনা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে জেলেরা ও দেশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে আমরা বৃষ্টির আশা করছি।'
হালদা নিয়ে প্রবীণ গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, 'মা মাছ ডিম দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তারা ডিম ছাড়ছেনা।'
হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার জেলে মোহাম্মদ দুলাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,'তিনদিন ধরে হালদার পাড়ে রাত কাটাচ্ছি। গতকাল (রোববার দিবাগত) রাত দেড়টার দিকে নদীর রামদাশ হাট থেকে মদুনাঘাট এলাকায় কিছু কিছু ডিম পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ডিম মিলেছে আধ কেজির মত। অন্যদিকে, গতবছর যে নয়াকুমে সবচেয়ে বেশি ডিম পাওয়া গিয়েছিলো, সেখানে এবার ডিম মিলছে না।'
সম্প্রতি নদীর ১৩টি পয়েন্টের ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটার (সূচক) পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হালদা গবেষক প্রভাষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মোট ১৩ টি পয়েন্টে নদীর পানির ভৌত ও রাসায়নিক মান আদর্শ রয়েছে। কিন্তু পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এজন্য পাহাড়ি ঢালে বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত দরকার। তাহলেই কেবল মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে।
৪০ বছর ধরে হালদায় ডিম সংগ্রহ করছেন উত্তর মাদার্শা এলাকার জেলে আশু জলদাশ। তিনি বলেন, 'এখন যেসব ডিম পাওয়া যাচ্ছে সবই নমুনা। এসব থেকে রেণু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, তাই এখনও নদীতেই যাইনি।'