দুই বছর পর সুদিন ফিরেছে হালদায়, পোনা থেকে ৪০ কোটি টাকার ব্যবসার আশা
টানা দুই বছর খারাপ মৌসূমের পর সুদিন ফিরেছে হালদায়। অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও এবার খুশি মনেই বাড়ি ফিরেছেন জেলেরা।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও প্রাথমিকভাবে ১৪ থেকে ১৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
যা থেকে অন্তত সাড়ে ৩০০ কেজি রেণু পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। রেণু থেকে মাছ হওয়া পর্যন্ত যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে ৪০ কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ডিমের পরিমাণ নির্ণয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটি আগামী শুক্রবার বসবে।'
'তবে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ধারণা করছি, ১৮ হাজার কেজির মত ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া হ্যাচারিতে রেণু তৈরী পর্যন্ত সব কিছু ঠিক থাকলে ৪০০ কেজি রেণু পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা,' বলেন তিনি।
তবে শাহ মাদারী হ্যাচারীর সমন্বয়ক মো. ইলিয়াছ বলেন, 'আমাদের হিসাবে এবার ১৩ থেকে ১৪ হাজার কেজির মত ডিম সংগ্রহ হয়েছে। এখান থেকে সাড়ে ৩০০ কেজির মত রেণু হতে পারে। মূলত জেলেরা প্রস্তুত না থাকায় অনেক ডিম পানিতে ভেসে গেছে।'
মৎস্যচাষীরা জানান, সাধারণ রেণুর চেয়ে হালদা নদীর রেণুর গুণগত মান অনেক বেশি। তাই তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে হালদার রেণু।
২০২০ সালে প্রতি কেজি রেণু বিক্রি হয় ৯০ হাজার টাকায়, ২০২১ সালে প্রতিকেজি রেণুর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ২০২২ সালে রেকর্ড ২ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি হয় রেণু।
তবে এবার একেবারে মৌসূমের শেষদিকে ডিম পাওয়ায় ৭০ হাজার ১ লাখ টাকা পর্যন্ত রেণুর দাম উঠতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
হাটহাজারীর মাছুয়াঘোনা হ্যাচারীর রেণু উৎপাদনকারী মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, 'হ্যাচারি ও পুকুরে যেসব ডিম প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে সেখান থেকে সাড়ে ৩০০ কেজি পোনা পাওয়ার আসা করা হচ্ছে। বাজার মূল্যে পোনার দাম হবে সাড়ে চার কোটি টাকা।'
হালাদার পোনার চাহিদা বেশি যে কারণে
একক নদী হিসেবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে হালদা নদীর অবদান সবচেয়ে বেশি। হালদার কার্প জাতীয় মাছের বৃদ্ধির হার অন্যান্য উৎসের মাছের তুলনায় অনেক বেশি। তাই হালদার পোনা কিনতে সারাদেশ থেকেই ব্যবসায়িরা চট্টগ্রামে আসেন।
হালদা নদী ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু থেকে মাছ হিসেবে খাওয়ার টেবিলে আসা পর্যন্ত দেশের মৎস্য খাতে চার ধাপে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে। হালদার একটি কাতলা মা-মাছ তৃতীয় বছর বয়স থেকে পরিপক্বতা লাভ করে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি মা-মাছ থেকে এক বছরে চার ধাপে (স্তরে) আয় করা যায়।
শাহ মাদারী হ্যাচারীর সমন্বয়ক মো. ইলিয়াছ বলেন, '১ লাখ টাকায় কেনা পোনা যখন আঙ্গুলি রেণুতে পরিণত হয় তখন তার দাম হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। হালদার এসব পোনা দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ৮ থেকে দশ কেজি ওজনের মাছে পরিণত হয়। যা প্রতি কেজি হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সে হিসাবে এবার সংগৃহীত পোনা থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।'
অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, 'মাটির কুয়া, সার্কুলার হ্যাচারি ও সার্কুলার ট্যাংক। এই তিন ধরনের পাত্রে ডিম থেকে রেণু ফোটানো হয়।। তবে মাটির কুয়া ও সার্কুলার হ্যাচারি রেণুর মর্টালিটি বেশি। তাই হালদার রেণুর সর্বোচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাহলে দেশ এখান থেকে আরও বেশি উপকৃত হবে।'
এ সময় রেণু পোনা ভেজালকারী সিন্ডিকেটের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, 'দুই বছর মন্দার পর হঠাৎ করে অনেক ডিম দিয়েছে মা মাছ, জেলেরা সব ডিম সংগ্রহ করতে পারেননি।'
'আবার অনেকে ইচ্ছে করেও সংগ্রহ করেননি। কারণ সেগুলো রাখার মত কুয়া-হ্যাচারি প্রস্তুত নেই। কিছু ডিম থেকে হয়তো রেণু প্রাকৃতিকভাবে নদীতেই ফুটবে। আবার ভাটার টানে সাগরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে,' বলেন তিনি।