দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: ‘নিজেদের খাবার কমিয়ে সন্তানের জন্য খাবার কিনি’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দামের কারণে বগুড়ার মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলে যাচ্ছে, প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে আমিষ বাদ দিচ্ছে অনেকে, কেউ কেউ সন্তানের খাবার কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে।
করোনাকালে নিজের গার্মেন্টস আইটেমের দুটি দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খন্ডকালীন চাকরি শুরু করেন বগুড়ার নাটাইপাড়ার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া। তিনি জানান, বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী আর দেড় বছরের এক সন্তান আছে তার।
সন্তানের দুধসহ অন্যান্য খাবারের পেছনে প্রতি মাসে অন্তত ৩ হাজার টাকা খরচ হয় তার।
"সব কিছুর দাম বাড়তি, আয় কম, সংসারের অন্য খাতেও খরচ বাড়ছে। সন্তানের খাবার কিনতে সমস্যা হচ্ছিল। এ কারণে আমি ও আমার স্ত্রী নিজেদের খাবার কমিয়েছি। আমাদের খাবার থেকে বাঁচানো টাকা দিয়ে সন্তানের জন্য খাবার কিনি এখন", বলেন কিবরিয়া।
কয়েক মাস আগেও অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে সন্তানদের জন্য বিভিন্ন রকমের খাবার কিনতেন মামুনুর রশিদ।
বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, "সন্তানরা স্কুলে যায়, তাদের পড়াশোনা করানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। চিন্তায় ঘুম আসে না, সন্তানদের প্রাইভেট, স্কুলের বেতন কীভাবে পরিশোধ করব? এখন ইচ্ছে থাকলেও বাচ্চাদের জন্য ফল কিনতে পারছি না। সব দিকে খরচ কমিয়ে টেনেটুনে সংসার চালানো লাগছে।"
বেসরকারি টেলিভিশনের এক গণমাধ্যমকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিসের বেতন দিয়ে এখন আর সংসার চলে চলে না।
"জমানো টাকা ভেঙে খাচ্ছি। এখন শঙ্কায় গচ্ছিত টাকা করে যেনো শেষ হয়ে যায়। এক ছেলে দুই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ত, তাকে এখন একজনের কাছে পড়াই। স্কুলের বেতন, বই-খাতা কেনা সবকিছুই এখন জুলুম হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরাই খবর প্রচার করি যে, বেতন বাড়েনি মানুষের!"
কলোনী এলাকার বাসিন্দা আসাফ-উদ-দৌলা নিওন বলেন, "সংসার চালাতে এখন শখের কবুতর বিক্রি করতে হচ্ছে। টাকার অভাবে মোটরসাইকেলের টায়ার কিনতে পারছি না। সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে এগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে।"
বগুড়ার নওদাপাড়া এলাকায় একটি ক্যাফেতে বসে ভারতীয় ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করেন কল্যাণ দাস।
"এখন মাছ-মাংসের বদলে তিনবেলা ভাজি, ভর্তা খাওয়া হচ্ছে। আগে কয়েক পদের রান্না হলেও এখন এক তরকারিই পাতে জুটছে", বলেন তিনি।