কনটেইনারের লিকেজ থেকে আগুন, কেমিক্যালের পরিমাণ ‘জানে না’ মালিকপক্ষ
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাখা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভর্তি কনটেইনারের লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ মনির হোসেন।
এদিকে মালিকপক্ষের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন ডিপোতে কী পরিমাণ কেমিক্যাল ছিল তা জানেন না তারা।
কেমিক্যাল রাখার কোনে ব্যবস্থাপনাই ছিল না
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে কেমিক্যাল রাখার কেনো ব্যবস্থাপনাই ছিলো না।
"সাধারণত কোন কনটেইনারে কী আছে, তার একটা চার্ট থাকার কথা। কেমিক্যালগুলো আইসোলেটেড অবস্থায় থাকার কথা। কিন্তু এর কিছুই ছিলো না।"
বিষয়টি স্বীকার করেছেন মালিক পক্ষের এক কর্মকর্তা। জানিয়েছেন ডিপোতে কী পরিমাণ কেমিকেল ছিল সে তথ্য তাদের কাছে নেই।
চিটাগং ডেনিম এর জিএম (এডমিন) শামসুল হায়দার চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "ডিপোতে কী পরিমাণ কেমিক্যাল ও পাম্পে কী পরিমাণ পেট্রোল আছে সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা এ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ডিপো সংশ্লিষ্টরা সবাই আহত অথবা স্পটে না থাকায় আমরা সে তথ্য পাচ্ছি না।"
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস আগ্রাবাদ শাখার ইন্সপেক্টর মাহবুব-ই-ইলাহী বলেন, কর্তৃপক্ষ জানেনা কী কেমিক্যাল আছে সেটা কীভাবে হয়। আমরা এর আগের দুর্ঘটনায়ও দেখেছি মালিক পক্ষ তথ্য গোপন করে। এ কারণেই আমাদের ৯ সঙ্গীকে জীবন দিতে হয়েছে।"
তিনি জানান, দুর্ঘটনাস্থলে আরও কয়েকটি মরদেহ পাওয়া গেছে। তবে দেহগুলোর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই।
নতুন বিস্ফোরণের শঙ্কা
এদিকে জ্বলন্ত কনটেনারগুলো থেকে ৩০ গজেরও কম দূরত্বে রয়েছে একটি ফুয়েল স্টেশন। এছাড়া হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভর্তি নতুন আরও কিছু কনটেইনারের সন্ধান পেয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর পর থেকে নতুন বিস্ফোরণের শঙ্কায় ডিপো এলাকা থেকে বেলা সাড়ে ১০ টার পর সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এটিকে এই মুহুর্তের সবচেয়ে বিপদজনক পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কনটেইনারগুলোর ভেতরে এখনো আগুন জ্বলছে। পাশে থাকা ফুয়েল স্টেশনে যাতে আগুন ছড়িয়ে না যায় সে জন্য মনিটর (বিশেষ যন্ত্র) দিয়ে দূর থেকে পানি ছিটাচ্ছেন। এর কিছু দূরেই হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কনটেইনার।
আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের লিডার উচিং মারমা টিবিএসকে বলেন, "পেট্রোল পাম্পটি আগুনের কাছাকাছি হওয়ায় যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য ডিপোর পশ্চিম পাশে যাতে আগুন আসতে না পারে সে জন্য ক্রমাগত পানি ছিটিয়ে যাওয়া হচ্ছে। "
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আব্দুল হক টিবিএসকে বলেন, " কনটেইনারের ভেতরে পানি প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। এছাড়াও একনো বিভিন্ন স্থানে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ড্রাম পরে আছে। তাই ঝুঁকি নিয়ে ভেতরে যাওয়া যাচ্ছে না।"
ফায়ার সার্ভিসের কুমিল্লা জোনের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, পেট্রোল আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকায় আগুন নতুন করে আর ছড়াবে না বলে আশা করছি। তবে পুরোপুরি নিভতে আরও সময় লাগবে।"
ভয়াবহ এ আগুনে ফায়ার সার্ভিসের কমপক্ষে ৯ কর্মীসহ ৪৯ জনের প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছে সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস । আহত ও দগ্ধের সংখ্যা প্রায় দুইশ।
স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএম ডিপোতে কাস্টমসের ছাড়পত্র ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো দাহ্য কেমিক্যাল মজুড করা হয়েছিল— দাবি প্রতিষ্ঠানটির। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, তাদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি তালিকায়ও নেই এ প্রতিষ্ঠানের নাম।
একটি আইসিডিতে কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি থাকতে হবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে শর্তাবলি নির্ধারণ করা রয়েছে। এসব শর্ত না মানলে লাইসেন্স স্থগিত রাখারও সুপারিশ করেছিল নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি। আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার শর্ত থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তার অনেকটা মানেনি বলে জানা গেছে।