বন্যা পরিস্থিতিতে জনশুমারি করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো, তথ্য-সংগ্রহে ব্যাঘাতের আশঙ্কা
সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের কিছু এলাকায় চোখ রাঙ্গাচ্ছে বন্যার পানি। উত্তরের কুড়িগ্রামেও ক্রমেই অবনতি পরিস্থিতির। এরই মধ্যে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আওতায় মূল কাজ তথ্য-সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
২০১৯ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার পর শুমারির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে চার দফায়। তবে শুমারির প্রধান কেনাকাটা- ট্যাব কেনার জটিলতার কারণে বাববার পিছিয়ে তথ্য সংগ্রহের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে বর্ষার মওসুমে।
বৃষ্টি ও বন্যার কারণে জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হলেও ছাতা কেনা বাবদ প্রায় ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে বিবিএস।
সিলেট এলাকায় তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন গণনাকারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানা যায়- হাটু পানি, কোমড় পানি মাড়িয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ না থাকায় বাসিন্দারা অন্ধকারে আছেন।
খাবার ও পানীয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা সাধারণ মানুষের কাছে শুমারির তথ্য চাইলে অনেকে দুর্ব্যবহারও করছেন। বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় গণনার কাজে ব্যবহার হওয়া ট্যাবগুলো চার্জের অভাবে আজ শনিবারের (১৮ জুন) পর ব্যবহার করা সম্ভব হবে না বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার তথ্য সংগ্রহ শুরুর দিনে বেশ কিছু বাড়িতে গিয়েছেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর গণনাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার থেকেই বৃষ্টি আর বন্যার পানি বাড়তে থাকায় সে কাজের গতি কমেছে।
পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে শনিবার সারাদিন ধরেই দফায় দফায় বৈঠক করেছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বিবিএস ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এসব বৈঠকে শুমারি যথাযথভাবে চালিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসচিব ড. দীপঙ্কর রায়।
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বিবিএস মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেনের মোবাইল অন্য একজন রিসিভ করে জানান তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিসটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং- এর অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাহাদাত হোসেন বলেন, 'সিলেট অঞ্চলে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে তাতে গণনায় একটা ব্যাঘাত আসবে- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।'
তিনি বলেন, এবারে গণনার মূল উপকরণ ট্যাব। আর বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় তাতে চার্জ থাকবে না। অবশ্য সেনাবাহিনীর কাছে ট্যাব চার্জের জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এই পরিসংখ্যানবিদ আরও বলেন, দুর্যোগের কারণে মানুষের মধ্যে তথ্য দেয়ার আগ্রহও হয়ত কম থাকবে। আবার অনেকেই দুর্ভোগের মাঝে থাকায় তথ্য পেতে সমস্যা হবে। এ অবস্থায় তথ্য সংগ্রহের সময়সীমা আরও কয়েক দিন বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।