বিএম ডিপো অগ্নিকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে পরিবেশে, পরিবেশবিদদের সতর্কতা
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপো কন্টেনাইরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও স্থানীয়দের স্বাস্থ্যের ওপর। খবর আরব নিউজের।
গত ৪ জুনের মর্মান্তিক এ ঘটনায় মারা যায় প্রায় ৫০ জনের মতো, আহতের সংখ্যা ২ শতাধিক। দেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড নিভতে সময় লাগে ৩ দিনেরও বেশি।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ, তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাখা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভর্তি কনটেইনারের লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ মাসের শেষের দিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।
তবে এ ঘটনার পরিবেশগত প্রভাব যাচাইয়ে আরও বেশি সময় লাগবে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া নমুনা পরীক্ষা চলছে, তবে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আফতাব আলী শেখ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে, এ ঘটনার কারণে অত্র এলাকার ওপর প্রভাব পরবে, বিশেষ করে এর মাটি ও পানিতে।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রিত পানির কারণে ওই এলাকার মাটি দূষিত হবে। রাসায়নিক মিশ্রিত পানির একটি অংশ জলাশয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়াও, ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতও হওয়ায় রাসায়নিক মিশ্রিত পানি নদীতে গিয়ে পড়েছে"।
এছাড়া দূষিত বায়ু ঘটনাস্থল থেকে হাজার কিলোমিটার দূরেও যেতে পারে। "বিস্ফোরণ আর আগুনের কারণে সৃষ্ট গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। আশেপাশের জেলায় এ বাতাস ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি ঢাকাতেও", বলেন অধ্যাপক আফতাব আলী।
ডিপো'র পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইতোমধ্যেই বায়ু দূষণ টের পাওয়া যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, "সীতাকুণ্ড এলাকায় অত্যধিক পরিমাণে বেশি ধূলিকণা দেখছি আমরা। এ এলাকার গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পরবে এ কারণে"।
বিগত বছরগুলোতে কারখানায় এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আরও ঘটেছে। ২০১২ সালে ঢাকার তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত বছর, সেজান জুসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৫২ জনের মৃত্যু হয়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে কেমিক্যাল রাখার কেনো ব্যবস্থাপনাই ছিলো না।
"সাধারণত কোন কনটেইনারে কী আছে, তার একটা চার্ট থাকার কথা। কেমিক্যালগুলো আইসোলেটেড অবস্থায় থাকার কথা। কিন্তু এর কিছুই ছিলো না।"
বিষয়টি স্বীকার করেছেন মালিক পক্ষের এক কর্মকর্তা। জানিয়েছেন ডিপোতে কী পরিমাণ কেমিকেল ছিল সে তথ্য তাদের কাছে নেই।
চিটাগং ডেনিম এর জিএম (এডমিন) শামসুল হায়দার চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "ডিপোতে কী পরিমাণ কেমিক্যাল ও পাম্পে কী পরিমাণ পেট্রোল আছে সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা এ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ডিপো সংশ্লিষ্টরা সবাই আহত অথবা স্পটে না থাকায় আমরা সে তথ্য পাচ্ছি না।"
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস আগ্রাবাদ শাখার ইন্সপেক্টর মাহবুব-ই-ইলাহী বলেন, কর্তৃপক্ষ জানেনা কী কেমিক্যাল আছে সেটা কীভাবে হয়। আমরা এর আগের দুর্ঘটনায়ও দেখেছি মালিক পক্ষ তথ্য গোপন করে। এ কারণেই আমাদের ৯ সঙ্গীকে জীবন দিতে হয়েছে।"
বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএম ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো দাহ্য কেমিক্যাল মজুদ করার জন্য কাস্টমসের ছাড়পত্র ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মহাসচিব পরিবেশবিজ্ঞানী শরিফ জামিন বলেন, যে কোনো কেমিক্যালের জন্য বিশেষ এলাকা থাকা উচিৎ। কিন্তু এ ধরনের সব নিয়ম এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
"এ ধরনের বিপর্যয়ে শুধু মানুষের মৃত্যুই হচ্ছে না। এসব দুর্ঘটনার পরবর্তী প্রভাবে বাতাস, মাটি ও পানির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে"।
"যথাযথ ও প্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কেমিক্যাল রাখার জন্য আলাদা বিশেষ জোন তৈরি করতে হবে। নাহলে, এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটবে"।