এক সপ্তাহে ১০০ টাকা বেড়েছে মণপ্রতি গমের দাম
ভোগ্যপণ্যের বাজারে আরও এক দফা বাড়লো গমের দাম। দেশের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) গমের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। আমদানি সংকটকে কাজে লাগিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
তবে আমদানিকারকরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য গমের দাম উর্ধ্বমুখী। এমনকি, ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর গম আমদানি আগের চেয়ে কমে গেছে। ফলে পূর্বের ধারাবাহিকতায় দাম বেড়েছে কিছুটা। তবে সরকারিভাবে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানির উদ্যোগে নিত্য এই খাদ্যপণ্যের দাম বেশি বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান আমদানিকারকরা।
ভোগ্যপেণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতিমণ গম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দামে, যা গত সপ্তাহের শুরুতে অর্থাৎ শনিবারেও ১ হাজার ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গত সপ্তাহের শুরুতে কানাডা থেকে আমদানিকৃত গমের দাম ছিল ২ হাজার ৫০ টাকা, যা বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। বাজার দর অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে প্রতিমণ গমের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে গমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ভালো মানের প্রতিমণ গমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০ টাকার নিচে, যা এখন ২ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৯০০ টাকার নিচে বিক্রি হওয়া ভারতীয় গম এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে ফেব্রুয়ারির পর থেকে গমের বাজার অস্থির হলেও মে মাসের মাঝামাঝি থেকে গমের দাম টানা নিম্নমুখী রয়েছে। এই অবস্থায় দেশিয় বাজারে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো আরও এক দফা বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ী ও মেসার্স হক ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আজিজুল হক জানান, গত এক-দেড় মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজরে টানা কমেছে ভোগ্যপণ্য গমের দাম। কিন্তু দেশের আমদানিকাকরা সিন্ডিকেট করে পণ্যটির দাম আরও এক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমদানির পর পাইকারি পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম সমন্বয় করে দিলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।
তবে গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, দেশে গমের চাহিদার তুলনায় আমদানি সংকট রয়েছে। ভারতের গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর যেসব গম আমদানি হয়েছে তাতে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ খরচ পড়েছে। ফলে আগের বাড়তি দামে কেনা পণ্য হিসেবে এখনও পণ্যটির দাম বাড়ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমলেও এই সময়ে দেশে কোনো গম আমদানি হয়নি। ফলে দামও কমে নি।
আলমগীর পারভেজসহ আরও একাধিক আমদানিকারক জানান, গম আমদানি করতে রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগ সফল হলে সরকারিভাবে রাশিয়া থেকে আগামী দুই মাসের মধ্যে ২ লাখ টন গম আমদানি হবে। পরবর্তী মাসে আরও এক লাখ টন গম আসবে। এছাড়া, আরও কিছু দেশ থেকে সরকারি জি-টু-জি পদ্ধতিতে গম আমদানির চেষ্টা চলছে। দাম খুব বেশি না কমলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব গম ভূমিকা রাখবে।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের (চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর) উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৬ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯০৫ টন আমদানি হয়েছে। এরপর এক মাসের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কোনো গম আমদানি হয়নি।
গত অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) দেশে গম আমদানির পরিমান ছিল ৪৮ লাখ মেট্রিক টন। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৬০ লাখ টন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে ৩ লাখ টন গম রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে উভয় পক্ষের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় পক্ষ আগামী ৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকে গমের দাম এবং সরবরাহের সময় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। রাশিয়া ছাড়াও ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আর্জেন্টিনা থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে গম আমদানির চেষ্টা করছে সরকার।