১৯৯৪ সালে শেখ হাসিনার ওপর হামলারকারী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে শনিবার (২৫ জুন) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
"শনিবার কক্সবাজারের টেকনাফে আসামির বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল তাকে গ্রেপ্তার করেছে", রোববার (২৬ জুন) কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান খন্দকার আল মঈন।
পাবনা ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে ১৯৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১৯ রায় ঘোষণা করা হয়। এর পরের দিনই সে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আত্মগোপন করে।
র্যাব আরও জানায়, কিছুদিন অবস্থানের পর দেশে ফিরে আসে। পরবর্তী সময়ে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে দেশের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকে।
১৯৯৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা নিক্ষেপের অভিযোগে পাবনার একটি আদালত ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ২০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
১৯৯৭ সালে ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এর মধ্যে ৫ জন আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাদেরকে ঐ মামলা হতে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই গ্রেপ্তারকৃত জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মোখলেছুর রহমান বাবলু, একেএম আখতারুজ্জামান, জাকারিয়া পিন্টু, মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল, মাহবুবুর রহমান পলাশ, শামসুল আলম, মুজিবুর রহমান, শহিদুল ইসলাম অটল ও শামসুজ্জামান।
আওয়ামী লীগ বলেছে, ১৯৯৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার সময় ঈশ্বরদীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তার গাড়িতে গুলি ছুড়ে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মামলাটি র পুনঃতদন্ত হয়। এক বছর পরও মামলায় কোনো সাক্ষী না পাওয়ায় চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে নতুন করে তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান।
তদন্ত শেষে ঈশ্বরদী বিএনপি ও যুবদলের ৫২ শীর্ষ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে নতুন চার্জশিট তৈরি করা হয়।
২০১৯ সালের ৩০ জুন ৩০ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে, ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের তৎকালীন নেতা ছিলেন তারা। আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। একই বছরের ২ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আরও দুই আসামি। পরদিন রাতে আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জাকারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর, ৩৪ জন আসামি এখন কারাগারে, ১৩ জন পলাতক এবং বিগত ২৫ বছরে মারা গেছে পাঁচজন।