শরীয়তপুর থেকে ঢাকা পৌঁছে নাস্তা করে দুপুরেই আবার শরীয়তপুরে
শরীয়তপুরের বাসিন্দা মিহির চন্দ্র পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু প্রথম দিনই সেতুতে করে ঢাকায় এসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার দুপুরের মধ্যেই শরীয়তপুর ফিরে গেছেন।
মিহির চন্দ্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম বাসে করে ঢাকায় গিয়ে নাস্তা করেছি। স্যানিটারির কিছু মালামাল কিনে আবার সেই বাসেই সেতুর ওপর দিয়ে শরীয়তপুর আসলাম।"
শরীয়তপুর থেকে আজ ঢাকার পথে প্রথম ছেড়ে যাওয়া বাসটি সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে আবার ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুর পৌঁছায় বেলা দুইটায়।
"গাড়ি থেকে নেমে নিজের শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম আমি ঠিক আছি কি না। আসলে সেতু দিয়ে পার হওয়ার অনুভূতি ভাষায় বুঝাতে পারব না," বলেন তিনি।
শরীয়তপুরের সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী, মিরাশার চাষি বাজার থেকে নিয়মিত কাঁচামাল কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন তিনি।
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর আজ তিনিও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সবজি বিক্রি করতে।
ইয়াকুব বলেন, "এতো দিন ফেরিতে করে মালামাল নিতাম। ঘাটে বাসে থাকতে থাকতে সবজির কালার নষ্ট হয়ে যেতে। কম দাম পেতাম। অনেক সময় লস হতো।"
আগে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যেতে সময় লাগত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। আগে ঢাকায় আসতে তিনবার বাহন পাল্টাতে হতো। প্রথমে বাসে চড়ে ফেরি ঘাটে নেমে ফেরিতে চাপতে হতো। তারপর ফেরি থেকে নেমে আবার উঠতে হতো নতুন বাসে। কখনও কখনও যানজট ও আবহাওয়া খারাপ থাকলে সারা দিনই বসে থাকতে হতো ফেরি ঘাটে। সেই দূরত্ব এখন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় পাড়ি দিতে পেরে দারুণ খুশি ইয়াকুব। এখন যানবাহনও পাল্টাতে হচ্ছে না, এক বাসে বসেই চলে আসতে পারছেন সরাসরি ঢাকায়।
তিনি বলেন, "আজ মাল নিয়ে আর অপেক্ষা করতে হবে না। এখন রওনা দিচ্ছি বিকালেই ঢাকায় পৌঁছে বিক্রি করে দিতে পারব। বিশ্বাস করি আর লোকসান হবে না।"
ঢাকা থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে খুলনায় যাচ্ছিলেন চালক খলিলুর রহমান।
দীর্ঘদিন গ্যাস নিয়ে খুলনা ঢাকা ধরে যাতায়াত করেন তিনি। প্রতিবারই ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হতো। কাচাঁমাল আর জরুরি গাড়ি পার হলে তারপর পারাপারের সুযোগ পেতেন।
"আজকের মতো এমন আনন্দ আর কখনও পাইনি। মনে হয় গাড়ি চালানের জীবনে এই প্রথম দিন সুখ পাইলাম। মনেই হয় নাই যে পদ্মা নদী পার হইলাম। এখন আর মালামাল আনা নেওয়ার আর কোন ঝামেলাই থাকলো না", বলেন তিনি।
"কোনো উৎসব এলে তো ৫ থেকে ৭ দিনও ঘাটে বসে থাকতে হতো। মালিকের বকা শুনতাম আর নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে খাওয়া দাওয়া করতাম। এখন মালিকও লাভবান হবে আমরাও লাভবান হবো। পদ্মা সেতু দেশের চেহারাই পাল্টাইয়া দিবো।"
শরীয়তপুরের আংগারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রেবেকা বেগম পরিবার, সেতু দিয়ে সবার আগে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় যেতে তিন দিন আগেই টিকিট কিনে রেখেছিলেন।
"যখন সেতুর ওপর ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল স্বপ্নের মধ্যে আছি। পার হতেই মনে হলো স্বপ্ন নয় এটাই সত্যি।"
"মনে হচ্ছে আবার ঘুরে বাড়ি চলে যাই। এক সপ্তাহ পর সেতুর ওপর দিয়েই আসব সেটাই এখন মাথার মধ্যে ঘুরছে। কবে আবার ফিরব। আবার দেখব স্বপ্নের সেতু। তবে সেতু স্পর্শ করতে পারিনি তাই আফসোস লাগছে", বলেন তিনি।
শরীয়তপুর থেকে প্রথম ছেড়ে যাওয়া বাসের যাত্রী আনিছুর রহমান বলেন, ১২ টায় ঢাকায় বাসে উঠলাম দুইটায় শরীয়তপুর আসলাম যা জীবনে ভাবিনি। মনে হচ্ছে ঘুমের ঘোরে শরীয়তপুর চলে এসেছি।
"ইচ্ছে করলে বাড়িতে সবার সাথে দেখা করে কাজ শেষে আজই ঢাকায় সেতুর ওপর দিয়ে চলে যেতে পারব। এটা আমাদের শরীয়তপুরের মানুষের ভাবতে অবাকই লাগছে। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য।"
শনিবার (২৫ জুন) ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ফলক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ ভোরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরই পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে গাড়ির দীর্ঘ জট দেখা যায়।
সকাল ৬টায় সেতুর গেট খোলার আগে থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে শত শত বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করতে দেখা যায়।