ঈদের ১৫ দিন আগে বকেয়া পরিশোধের দাবি চামড়া ব্যবসায়ীদের
ট্যানারিমালিকদের কাছে আড়তদারদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ টাকা ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে পরিশোধের দাবি করেছেন তারা। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দিলে মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তাদের।
ট্যানারি মালিকরা বলছেন যে তারা বকেয়া টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছেন। চামড়া কিনতে ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা পাওয়ার সাথে সাথেই তারা কিছু টাকা আড়ৎদারদের দিবেন।
কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএসএমএ) এর সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত কয়েক বছর মিলিয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে এখন প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ঈদুল আজহার ১৫ দিন আগে বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হলে আমরা সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ করতে পারবো।"
চামড়া সংরক্ষণে লবণ প্রয়োজন হয়; টাকা পেলে সেই লবণ কিনে রাখতে পারবেন তারা। এমনকি গুদামও ভাড়া নিয়ে রাখা যাবে।
টিপু সুলতান বলেন, "প্রতি বছরই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কাঁচা চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। সেই ঋণের টাকা পেয়ে ঈদের দুই তিন দিন আগে ট্যানারি মালিকরা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন।"
"ঈদের দুই তিন দিন আগে টাকা দেওয়ায় সেই টাকা দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ করতে হয়। আমরা এবার বকেয়া পুরো টাকা পরিশোধ চাই।"
২০১৯ সালে কাঁচা চামড়া কেনাবেচা বকেয়া টাকা পরিশোধ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন কিছু বকেয়া টাকা পেয়েছিলেন আড়তদাররা।
টিপু সুলতান বলেন, "উদ্যোগ নেওয়ার পরও এখনো সব বকেয়া টাকা পরিশোধ করছে না তারা। এটা হতাশ করেছে আমাদের।"
১৫২টি লিস্টেট ট্যানারির মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি ট্যানারির কাছে বকেয়া রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ১৯৪ জন আড়দার তালিকাভুক্ত আছে। আড়দাররা মূলধন সংকটে পরেছে। কেউ কেউ বকেয়া টাকা না পেয়ে এ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এর প্রেসিডেন্ট শাহীন টিবিএসকে বলেন, "গত ২ -৩ বছর ধরে নতুন কোন বকেয়া হচ্ছে না। এর আগে যে বকেয়া টাকা ছিল সেটা পরিশোধে অনেক মালিকের সমস্যায় পড়েছে। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর করে নেওয়ার ফলে অনেক ট্যানারি মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।"
আড়দাররা লবণ দিয়ে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করে এরপর ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে। রাজধানীর অন্যতম চামড়ার বাজার লালবাগের পোস্তায় কথা হয় প্রায় ১০ জন আড়দারদের সঙ্গে। তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে সারাদেশ থেকে চামড়া সংরক্ষণ করেন বলে জানান। ঈদের কয়েকদিন আগে টাকা দিতে হয় তাদেরকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝারি আকারের একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণ করতে ৮ থেকে ৯ কেজি লবণ লাগে। এবার লবণের দামও বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত টাকা পেলে লবণ কিনে রাখতে পারবেন তারা।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বর্গফুট কাঁচা চামড়া (হাইড ও স্কিন) প্রক্রিয়াজাত করা হয়, এর মধ্যে গরুর চামড়া ৬৩.৯৮ শতাংশ, ছাগলের চামড়া ৩১.৭৪ শতাংশ, মহিষের চামড়া ২.২৩ শতাংশ এবং ভেড়ার চামড়া ১.০৫ শতাংশ।
নীতিমালায় বলা হয়, কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে এ শিল্পটি কিছু সমস্যার সম্মখীন হচ্ছে। বিভিন্ন ধাপের সমস্যাগুলো সমন্বিতভাবে দূর করতে হবে।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ঈদুল আজহায় ১ কোটি ১০ লাখের মতো পশু জবাই হয়। এগুলোর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ গরু-মহিষ। মোট চামড়ার ৫০ শতাংশই সংগ্রহ হয় ঈদুল আজহায়।