আত্মজীবনীতে নীনা গুপ্তার অজানা জীবন!
দিন কয়েক আগে প্রকাশিত হয় বলিউড অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার আত্মজীবনী 'সাচ কাহু তো'। পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করে বইটি।
অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান ভার্চুয়ালি বইটি প্রকাশ করেন।
এ বইয়ে জীবনযুদ্ধ এবং একাকীত্ববোধের গল্প উঠে এসেছে বর্তমানে ৬২ বছর বয়সী নীনার। উঠে এসেছে ভাঙা প্রেম, সন্তানের জন্ম এবং পরিবার নিয়ে আরও অজানা গল্প।
বইটি থেকে কয়েকটি কাহিনি এখানে তুলে ধরা হলো:
সি-সেকশনের জন্য 'কুমারী মা' নীনার কাছে ছিল না ১০ হাজার টাকা
বইয়ের থেকেই একটি পাতার ছোট্ট অংশ নেটমাধ্যমে শেয়ার করেছেন তার কন্যা মাসাবা গুপ্তা। কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডস এবং নীনা গুপ্তার কন্যা মাসাবা পেশায় একজন সফল ডিজাইনার। ওই অংশে আঁচ পাওয়া গেছে মাসাবার জন্মের সময় নীনার আর্থিক দুরাবস্থার কথা।
মাসাবার কথায়, তার জন্মানোর প্রাক্কালে আর্থিক দিকে থেকে অত্যন্ত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন নীনা। সেই মুহূর্তে অভিনেত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছিল মাত্র হাজার দুয়েক টাকা। অথচ অপারেশন করাতে তৎকালীন খরচ ছিল কমবেশি ১০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত মাসাবার জন্মের জন্য নির্ধারিত 'ডেটে'র কিছুদিন আগে 'ট্যাক্স রিটার্নে'র সুবাদে নীনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৯ হাজার টাকা। স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন সন্তানসম্ভবা অভিনেত্রী। কারণ সেই মুহূর্তে সব মিলিয়ে তার অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত টাকার অংকটা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১২ হাজারে।
বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সতীশ কৌশিক
আত্মজীবনীতে নীনা লিখেছেন, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে তাকে ভরসা দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বলিউড অভিনেতা সতীশ কৌশিক। সন্তানসম্ভবা নীনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, সঙ্গে এ-ও বলেছিলেন, যদি নীনার সন্তানের গায়ের রঙ কালো হয়, তাহলে যেন অভিনেত্রী ওই সন্তানের বাবা হিসেবে সতীশের নাম লোকসমাজে পরিচয় দিতে ইতস্তত না করেন। কেননা, তাহলে তাকে নিয়ে কেউ সন্দেহ করবে না; কারণ সতীশের গায়ের রঙও যথেষ্ট কালো।
সমকামী ব্যাংকারকে বিয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন বন্ধু
১৯৮০-এর দশকে কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে নীনা সম্পর্কে জড়ানোর ফলশ্রুতি হিসেবে জন্ম নিয়েছিল তাদের কন্যা সন্তান মাসাবা।
নীনা লিখেছেন, তিনি যখন সন্তানসম্ভবা, তখন বন্ধু সুজয় দত্ত তার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। পাছে নীনাকে লোকনিন্দার মুখোমুখি হতে হয়, সেই আশঙ্কায়। সেই ভেবে নীনার সঙ্গে এক ব্যক্তির বিয়ের ব্যবস্থাও তিনি প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন। এরপর নীনাকে সেই ব্যক্তির কথা বলে সুজয় জানান, নামি ব্যাংকের এক উঁচু পদে থাকা ওই কর্মকর্তা আসলে সমকামী। সামাজিক লজ্জা ও নিন্দা থেকে বাঁচতে তিনি নীনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। নীনার গর্ভের সন্তান নিয়েও বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই তার। নীনা স্বচ্ছন্দে ওই সন্তানের পিতৃপরিচয় হিসেবে ওই ব্যক্তির নাম বলতে পারবেন।
কিন্তু সেই ব্যক্তি যে নীনা কিংবা তার সন্তানের জীবনে জড়িয়ে থাকবেন না, সে কথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল তখনই।
সব শুনে হেসে ফেলেছিলেন নীনা। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র কোনো রকম 'বিতর্ক' এড়াতে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি নন। নিজের সন্তানের জন্য একজন মা যতটা করতে পারে, তিনি ততটাই করবেন। ততদূরই যাবেন। এর জন্য তার মনে কোনো ভয় কিংবা চিন্তা নেই। আর আপাতত যতদিন তার শরীরে অন্তঃসত্বা হওয়ার সব চিহ্ন প্রকট হচ্ছে, ততদিন তিনি ঢিলে পোশাক পরে চালিয়ে দেবেন কাজ!
ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে দেখা করার ট্রিপ বাতিল করতেই ৫ বছর কথা হয়নি তাদের
মাসাবার সঙ্গে ভিভ রিচার্ডসের দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন নীনা। কিন্তু সেই সময় মাসাবার স্কুলের অ্যাডমিশন পড়ে যায়। মাসাবা সেই ট্রিপ নিয়ে বেজায় উচ্ছ্বসিত ছিল। বাবার সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়। নীনার এক আন্টি তাকে 'জামনাবাই নারসি স্কুলে'র ট্রাস্টির সঙ্গে দেখা করান। তবে ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে ট্রিপে দিন মিলছিল না।
নীনা ভিভকে জানান, ট্রিপের দিন রিসিডিউল করতে হবে। তবে মাসাবার অ্যাডমিশনের গুরুত্ব বুঝতে পারেননি ভিভ। এমনকি নীনাও ভিভকে সেই মুহূর্তে বোঝাতে পারেননি একটা শিশুর জন্য ভালো স্কুলে অ্যাডমিশন নেওয়াটা কতটা জরুরি।
ভিভ মনে করেন, নীনা সাক্ষাৎ করাটা প্রয়োজন মনে করেননি। শুধুমাত্র অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তেমনটা মোটেই নয়। তবে ভিভ রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর প্রায় ৫ বছর ফোন করেননি।
এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায় প্রথম বিয়ে
নীনার আত্মজীবনী 'সাচ কাহু তো'তে খুব অল্প বয়সে প্রথম বিয়ে সম্পর্কে লিখেছেন নীনা। এক বছরের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ হয় বলে জানিয়েছেন।
আত্মজীবনীতে আমলান কুসুম ঘোষ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন অভিনেত্রী। যার সঙ্গে অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল নীনার। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তিনি সংস্কৃতে স্নাতক নিয়ে পড়ার সময় ওই ব্যক্তি আইআইটির ছাত্র ছিলেন।
'ক্যাম্পাসে আমি আর আমলান লুকিয়ে দেখা করেছিলাম। ওর হোস্টেল আর আমার বাড়ির কাছেই ছিল জায়গাটা। ওর বাবা-মা অন্য শহরে থাকতেন; তবে ওর দাদু আমার গলিতে থাকতেন, তাই ডব্লিউইএতে উৎসব ও ছুটি কাটাতে আসত ও।'
আমলনের সঙ্গে শ্রীনগরে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি পেতে নীনা তাকে বিয়ে করেন। যদিও পরে দম্পতির দুজনের বুঝতে পারেন, তারা একে অপরের জন্য নয়।
নীনার কথায়, 'আমলানের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা ছিল। সময় ও আমাদের বড় হওয়ার প্রেক্ষিতে মনে হতো সে ধরে নিয়েছিল, আমি শেষ পর্যন্ত পরিবারে মনোনিবেশ করব। তবে আমি কিছুটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছিলাম এবং নিজেকে কখনো একজন নিয়মিত গৃহিণী হিসাবে দেখিনি। আমি জীবন থেকে আরও চেয়েছিলাম এবং যত বেশি থিয়েটার করেছি, আমার পথ আরও প্রশস্ত হয়ে উঠছিল।'
বিয়ের এক বছরের মধ্যেই নীনা-আমলান আলাদা হয়ে যান।
'চোলি কে পিছে'র শুটিংয়ে নীনাকে 'প্যাডেড ব্রা' পরার নির্দেশ দেন সুভাষ ঘাই
বইয়ের একটি অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে 'খলনায়ক' (১৯৯৩) ছবির সুপারহিট গান 'চোলি কে পিছে'র শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। এই ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সুভাষ ঘাই।
নীনা জানিয়েছেন, কেমনভাবে এই গানের জন্য নীনার লুক দেখে রেগে গিয়েছিলেন পরিচালক, এবং মুখের ওপর দাবি জানিয়েছিলেন 'প্যাডেড ব্রা' পরার জন্য। এই ঘটনা বেজায় লজ্জায় ফেলেছিল অভিনেত্রীকে।
নীনা আরও লিখেন, "ওরা আমাকে গুজরাতি লোকগানের পোশাক পরিয়ে সুভাষজির কাছে পাঠাল, লুক ঠিক আছে কি না যাচাই করবার জন্য। উনি চিৎকার করে উঠলেন! বললেন, 'না, না, না! কিছু ভরো!' আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, উনি আমার চোলির কথা বলছিলেন এবং ওনার মতে সেটা আরও পরিপূর্ণ দেখানোর দরকার ছিল। আমি জানি উনি কোনো ব্যক্তিগত মন্তব্য করেননি… নিশ্চয়ই ওনার ভাবনায় কিছু একটা ছিল। সেইদিন আমি শুট করিনি। পরের দিন আমাকে ওনার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো অন্য একটা পোশাকে, যার নিচে ছিল একটা মারাত্মক ভারি প্যাডেড ব্রা। দেখে মনে হলো, উনি সন্তুষ্ট হয়েছেন।"
'সুভাষ ঘাই খুব বেশি খুঁতখুতে মানুষ, ওনার কী চাই, কেমন চাই- সে ব্যাপারে আপস করেন না... সেই কারণেই উনি এত বড়োমাপের পরিচালক,' যোগ করেন নীনা।
এমনই আরও নানা অজানা গল্প নিজের আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।
-
নোট: 'হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা' থেকে এখানে শিরোনাম ও বাক্যবিন্যাস কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হলো