কলকাতার মীরাক্কেল মাতাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রতিযোগী
গত বছরের শেষদিকে ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলায় শুরু হয়েছে কৌতুক বিষয়ক রিয়েলিটি শো 'মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার সিজন টেন'। টানা চার বছর বিরতির পর শুরু হলো নতুন এই সিজন।
গত কয়েকটি সিজনে দেখা গেছে বাংলাদেশি প্রতিযোগিদের। শুধু দেখা গেছে বললে ভুল হবে, পারফরম্যান্স দিয়ে রীতিমতো ফাইনাল অবধি পৌঁছে গিয়েছিলেন কেউ কেউ। কেউ হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন, কেউ রানারআপ।
এবারের সিজন টেন-এ বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন চার প্রতিযোগী। এরইমধ্যে তাদের পারফরম্যান্স দেখা যাচ্ছে পর্দায়। বাংলাদেশ তো বটেই, কলকাতার দর্শকেরাও মুগ্ধ তাদের পারফরম্যান্সে।
কদিন আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা হয় এই চার প্রতিযোগী আফনান আহমেদ রাশেদ, আবিদুল ইসলাম রিমন, জিসান আহমেদ ও তৌফিক এলাহি আনসারির।
অনলাইন আলাপে চারজনই জানান তাদের মীরাক্কেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ বলেন, 'মীরাক্কেলে যাওয়ার জন্য আমরা অডিশন দিই ২০১৯ সালে। মীরাক্কেল কর্তৃপক্ষ ঢাকায় এসে আমাদের অডিশন নেন। টানা দুদিনের অডিশন শেষে আমি মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার গ্রিন কার্ড পাই। তবে এরইমধ্যে ২০২০ সালের শুরুতে অনলাইনে অডিশন হয়। সেখান থেকেই আমাদের গ্রুমিংয়ের এবং অংশগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের দেশে ফিরে আসতে হয়। তারপর থেকে অপেক্ষা শুরু হয়, কবে যাওয়ার সুযোগ হবে। শেষ অবধি আমরা চারজন গত বছরের শেষদিকে কলকাতায় গিয়ে মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই।'
তবে আবিদুল ইসলাম রিমনের গল্পটা একটু চ্যালেঞ্জিং। ২০১৬ সালে স্নাতক শেষ করেন। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন, মীরাক্কেলে অংশ নিয়ে তবেই মাস্টার্স কমপ্লিট করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত চার বছর মীরাক্কেল প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। পোস্ট গ্রাজুয়েশন করাও বন্ধ ছিল রিমনের।
পড়িবার থেকে চাপ থাকলেও তারা রিমনের এই জেদকে প্রশয় দিয়েছেন। এ কারণেই তিনি আজ মীরাক্কেলের মঞ্চে।
রিমন বলেন, 'সবার ভালোবাসা ও উৎসাহের কারণেই মীরাক্কেলের মতো একটা বড় প্লাটফর্মে অংশ নিতে পেরেছি। এখন সামনে এগিয়ে যেতে চাই।'
বাকি দুজনের গল্পটাও একই রকম। অডিশন ও নিজের চেষ্টাতেই অংশ নিতে পেরেছেন এই প্রতিযোগিতায়। তবে গ্রুমিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জিসান আহমেদ বলেন, 'সবাই খুব সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে কলকাতার প্রতিযোগী ও গ্রুমাররা অনবরত চেষ্টা করছেন। আর দেশ থেকে তো একটা বড় সাপোর্ট পাচ্ছি। সবার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।'
মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন আরেক প্রতিযোগী তৌফিক এলাহী আনসারি। বললেন,'ক্যাম্পে আমরা সারাদিন খুব মজা করি। আমরা যখন যেটা খেতে চাই, সেটা পাই। শুধু জোকসের আকাল! তাছাড়া সব কিছুই আছে!'
ক্যাম্পের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, 'আমাদের বিজয় দিবস সবাই মিলে উদযাপন করেছে। সেদিন ক্যাম্পের ছাদে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছে। রাতে কেক কাটা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী- এটা ভেবেই তারা আমাদের আরও বেশি খাতির করেন। আমরা বিষয়টা খুবই উপভোগ করি।'
টানা নয় সিজনে মীরাক্কেলের বিচারক হিসেবে কলকাতার অভিনেতা পরান বন্ধ্যোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র ও রজতাভ দত্ত দায়িত্ব পালন করলেও এবার পরিবর্তন এসেছে। এখন দায়িত্বে আছেন পাওলি দাম, রুদ্রনীল ঘোষ ও সোহম চক্রবর্তী। উপস্থাপনায় যথারীতি মীর আফসার আলী।
বিচারকদের সান্নিধ্য এবং মীরের মতো উপস্থাপকের সরস উপস্থাপনায় বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা ভালোমতোই এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে সামনে সেরা হবেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে বলে আলাপে জানান তারা।