প্রয়াত বিশিষ্ট সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য
'মেমসাহেব'সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্ট্রা সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য মারা গেছেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ১০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) টালিগঞ্জের বাড়িতে কথা সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
১৯৩১ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরে পশ্চিমবঙ্গেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করেছেন জনপ্রিয় লেখক নিমাই ভট্টাচার্য।
প্রথম জীবনে সাংবাদিকের পেশা গ্রহণ করেন নিমাই ভট্টাচার্য। কলকাতায় সাংবাদিকতা শুরু করলেও পরে দীর্ঘ ২৫ বছর দিল্লিতে সাংবাদিকতা করেন তিনি।
সাংবাদিকতায় থাকার সুবাদে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সেই সময়কার রাজনৈতিক মহল এবং একই সঙ্গে গ্ল্যামারের দুনিয়াকে। সেই অভিজ্ঞতা ছায়া ফেলে তার গল্পে-উপন্যাসে।
১৯৬৩ সালে তার উপন্য়াস অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে তার আরও ৪টি উপন্য়াস সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এরপর সাহিত্য় রচনাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন নিমাই ভট্টাচার্য।
নিমাই ভট্টাচার্যের প্রথম গ্রন্থ 'রাজধানীর নেপথ্যে' প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। পরে লেখালেখিকেই পুরো সময়ের পেশা হিসেবে নেন। একটা দীর্ঘ পর্বে বাঙালির পড়ার খিদেকে মিটিয়েছে নিমাই ভট্টাচার্যের রচনা।
উপন্যাস, ছোট গল্পের বাইরে নিমাইবাবু লিখেছেন 'বিপ্লবী বিবেকানন্দ'র মতো বইও। বাংলায় 'জনপ্রিয় লেখক' বলতে যা বোঝায়, নিমাই ভট্টাচার্য ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই তা-ই। তার লেখা উপন্যাসের সংখ্যা ১৫০টিরও বেশি।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ 'ডিপ্লোম্যাট', মিনিবাস, 'ব্যাচেলর', 'রাজধানী এক্সপ্রেস', 'পথের শেষে' ইত্যাদি।
'মেমসাহেব', 'এডিসি', 'রাজধানী এক্সপ্রেস', 'গোধূলিয়া'— একের পর এক উপন্যাস এক সময়ে বাঙালির অন্দরমহলকে মাতিয়ে রেখেছিল। ১৯৭২ সালে তার উপন্যাস থেকেই নির্মিত হয় পিনাকী মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি 'মেমসাহেব'। উত্তমকুমার, অপর্ণা সেন অভিনীত সেই ছবি আজও বাংলা সিনেমার রোম্যান্টিক পর্বের মাইলফলক।
সাহিত্যে অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান প্রদান করেছে।
সাহিত্য়িকের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। মুখ্য়মন্ত্রী শোকবার্তায় জানিয়েছেন, "বিশিষ্ট সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্যের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার মৃত্যুতে সাহিত্য জগতে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হল। আমি নিমাই ভট্টাচার্যের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি"