মাত্রাতিরিক্ত পানি পানের কারণে মারা গিয়েছিলেন ব্রুস লি!
ব্রুস লি মারা যান ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই, হংকংয়ে। ততদিনে তিনি মার্শাল আর্টের কিংবদন্তি ও সিনেমা তারকা। তার এই অকালমৃত্যুর কারণ কখনোই স্পষ্ট করা হয়নি। এ কারণে এই তারকার মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কেউ কেউ তো ইঙ্গিত করে যে ব্রুস লি চীনা মাফিয়াদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
তবে ক্লিনিক্যাল কিডনি জার্নাল-এর ২০২২ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় ব্রুস লির মৃত্যুর একটি নতুন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, এই তারকা মারা যান হাইপোনেট্রেমিয়ায়, অর্থাৎ তার কিডনি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে না পারায়। খবর এল পাইস-এর।
ওই গবেষণায় বলা হয়, হাইপোনেট্রেমিয়া রোগটি বিরল নয়। হাসপাতালে ভর্তি করা প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী এই রোগে আক্রান্ত থাকে। অতিরিক্ত পানি পানে আসলে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হয় না।
নিয়তির নির্মম পরিহাস, 'পানি আমার বন্ধু হোক'—এই কথাটিকে জনপ্রিয় করেছিলেন ব্রুস লি। কিন্তু অতিরিক্ত পানি পানই খুব সম্ভব তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
ওই গবেষণার একজন লেখক মারিয়া ভ্যানেসা পেরেজ গোমেজ এল পাইসকে বলেন, '[গবেষণাটা] এতখানি প্রভাব ফেলবে, আমরা ভাবতেও পারিনি। যদিও আমরা চেয়েছি সুস্বাস্থ্যের জন্য কিডনির গুরুত্ব মানুষকে বোঝানো।'
পেরেজ গোমেজ জানান, গবেষণাটি নতুন কোনো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিচালনা করা হয়নি। এটি করা হয়েছে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সেসবের ওপর ভিত্তি করে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে—ব্রুস লির উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, শরীরে চর্বির পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০-২০ শতাংশ থাকা উচিত) এবং এন্টার দ্য ড্রাগন সিনেমাটি করার সময় চাপের কারণে ২২ পাউন্ড ওজন হারিয়েছিলেন। ওই সময় তার ওজন ১৩২ পাউন্ডে নেমে আসে। গবেষকরা আরও কিছু বিষয় পান, যেগুলো ইঙ্গিত করে যে ব্রুস লি অতিরিক্ত পানি পানের কারণে মারা যেতে পারেন।
যেদিন মারা যান, সেদিন ব্রুস লি গেম অভ ডেথ নিয়ে কাজ করছিলেন। ছবিটি তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর মুক্তি পায়। ওইদিন তিনি ছবির মূল অভিনেত্রী বেটি টিং পেই-এর সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যান।
বিকেলের দিকে ব্রুস লির প্রচণ্ড মাথাব্যথা আরম্ভ হয়। টিং পেই তখন তাকে অ্যাসপিরিন দেন।
কিন্তু তাতে কাজ হলো না। উল্টো তার মস্তিষ্ক ১ শতাংশ ফুলে ওজন ৪৯ থেকে বেড়ে ৫৬ আউন্স হয়ে যায়। রাত সোয়া দশটায় ব্রুস লিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পেরেজ গোমেজ জানান, একজন ব্যক্তি একবারে মাত্রাতিরিক্ত পানি পান করার পর হাইপোনেট্রেমিয়া হতে পারে। তবে অতিরিক্ত পানি পান ছাড়াও হাইপোনেট্রেমিয়া হয়। পেরেজ গোমেজের ধারণা, ব্রুস লির ক্ষেত্রে বেশ কিছু 'রিস্ক ফ্যাক্টর' ছিল যা তার কিডনির জন্য অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন কঠিন করে তুলেছিল।
'যেমন এই অভিনেতা প্রচুর পানি পান করতেন। তার ডায়েট মূলত তরলনির্ভর ছিল (যেমন, গাজরের জুস)। তিনি খেতেন কম এবং প্রচুর গাঁজাসেবন করতেন, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রচণ্ড তেষ্টা পেত। এছাড়াও তিনি ব্যথার জন্য অপিওয়েড এবং ফ্রুসেমাইডের মতো ডাই-ইউরেটিকস তথা রেচনক্রিয়া বৃদ্ধির ওষুধ নিতেন,' গোমেজ পেরেজ বলেন।
'অতিরিক্ত ব্যায়ামে, যেমনটা তিনি করতেন, অ্যান্টিডিউরেটিক হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে কিডনি থেকে পানি নিষ্কাশন কঠিন হয়ে পড়ে। [ব্রুস মারা যাওয়ার] কয়েক সপ্তাহ আগেও তিনি সেরেব্রাল ইডেমায় (মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়া) আক্রান্ত হয়েছিলেন। রেনাল ফেইলিউরও হয়েছিল [যে অবস্থায় কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে]। ওই সময় তার ইউরিয়ার পরিমাণ ৯২ এমজি/ডিএল। ইউরিয়ার পরিমাণ ৪০-এর ওপর থাকাই বিপজ্জনক। ওই দিনও যদি তিনি প্রচুর পানি পান করে থাকেন, তাহলে তিনি হাইপোনেট্রেমিয়াতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন।'
ব্রুস লি কী পরিমাণ পানি পান করতেন? তা কখনও জানা সম্ভব হবে না বলে জানান গবেষকরা।
গোমেজ পেরেজ আশা প্রকাশ করেন, তাদের গবেষণা জনস্বাস্থ্যের জন্য সতর্কতাবার্তা হবে। তিনি বলেন, 'আমরা চাই, মানুষ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রিস্ক ফ্যাক্টর ও কিডনির যত্নের গুরুত্ব বুঝুক।'