এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য অনেক সম্মানের: নুরুজ্জামান লাবু
২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবু একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইকে উপজীব্য করে বলিউডে তৈরি হয়েছে ফারাজ নামের একটি সিনেমা। সেটি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে। সেই প্রসঙ্গ এখন আলোচনার টেবিলে। এ সিনেমা প্রসঙ্গে সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
'২০১৯ সালের একদিনের কথা। সিনিয়র সাংবাদিক মোরশেদ আলী খান ভাই আমার বইটা খুঁজছিলেন। হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান শিরোনামে ২০১৭ সালে আমার একটি বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের উপজীব্য ছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা।
'মোরশেদ ভাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা বই চাইলেন। বইটা তখন মার্কেট আউট। ফলে তিনি কোথাও এর কপি পাচ্ছিলেন না। আমার কাছেও অতিরিক্ত কপি ছিল না। আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে বইটি সংগ্রহ করে তার কাছে পাঠালাম।
'তারপর বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম। মাস ছয়েক পর মোরশেদ ভাই আমাকে ফোন করে জানালেন বইটা তার কাছে চেয়েছিলেন তার বন্ধু, বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক মহেশ ভাট। এখন মহেশ ভাটের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভিশেষ ফিল্মস থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমার মোবাইল নম্বরটা তাদের দেবেন কি না। আমার সম্মতি নিয়ে মোরশেদ ভাই ভিশেষ ফিল্মসকে আমার মোবাইল নম্বর দিলেন।
'কদিন পর মুম্বাইয়ের ভিশেষ ফিল্মস-এর দুই কর্মকর্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কথা হলো মহেশ ভাটের ভাই মুকেশ ভাটের মেয়ে সাক্ষী ভাটের সঙ্গেও। নিয়মিতত যোগাযোগটা হচ্ছিল সাহিল সাইগালের সঙ্গে। তারা আমার বইটা সংগ্রহের পর ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়েছেন। ইংরেজি অনুবাদ পড়ে তারা মুগ্ধ হয়েছেন। বইটা অনেক তথ্যবহুল হিসেবে প্রশংসাও করলেন। এরপর বললেন, হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা নিয়ে একটা মুভি বানাবেন। এজন্য আমার বইয়ের তথ্য ব্যবহার করতে চান। বই থেকে তথ্য নিয়ে সিনেমার উপযোগী একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করবেন। এজন্য একটা চুক্তির প্রস্তাব দিলেন।
'আমি দু-এক দিন চিন্তার জন্য সময় চেয়ে নিলাম। তারপর ২০২০ সালের মার্চ মাসে তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ফেললাম। আমার সঙ্গে যখন চুক্তি হয়, তখনও তারা মুভির নাম ঠিক করেননি। তবে পরবর্তী সময়ে আমি আঁচ করতে পারি, হলি আর্টিজানে নিহত ফারাজকে মুখ্য ভূমিকায় রাখা হবে। যদিও আমার বইয়ে ফারাজের যে হিরোইজমের কথা বলা হচ্ছে সেটি নেই। ফারাজকে জঙ্গিরা ছেড়ে দিতে চেয়েছিল এবং তিনি তার দুই বান্ধবীকে ছেড়ে আসতে চাননি, এটি সত্য নয়। কারণ এই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। ঘটনার সময় হলি আর্টিজান ক্যাফেতে যারা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন, তারা কেউ এই ঘটনার কথা বলতে পারেননি। পুলিশের তদন্তেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়নি।
'কিন্তু যেহেতু এটি একটি সিনেমা এবং সিনেমাতে কাউকে না কাউকে হিরো বানানোর প্রবণতা থাকে, সেজন্য তারা ফারাজকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এ নিয়ে আমার কিছু বলারও নেই।
'ফারাজ নামে তৈরি হওয়া সিনেমাটা মুক্তি পাবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে এর ট্রেইলার প্রচারিত হচ্ছে। ট্রেইলারে দেখা গেছে, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির মতো একটি ক্যাফের সেট তারা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের পুলিশ, সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানও তারা মুভিতে রেখেছে। জঙ্গিদের পোশাক থেকে শুরু করে হামলার স্টাইল, পুরো বিষয়টি আমার বইয়ে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। তারা ফারাজের হিরোইজম বাদে পুরো বিষয়টি আমার বই থেকেই নিয়েছে।
'এই মুভিটির একটি অংশ বাংলাদেশে শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল। এক সপ্তাহের জন্য পুরো টিম বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি ও দিনক্ষণও ঠিক করেছিলে। আমাকেও আগেই তা জানানো হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
'আমার যদিও চুক্তি হয়েছিল ভিশেষ ফিল্মস-এর সঙ্গে। হানসাল মেহতা ছবির পরিচালক থাকার কথা জানতাম আগেই। যদিও পরে তারা মুভিটা টি-সিরিজসহ অনুভব সিনহাকে প্রযোজনায় যুক্ত করে। আমার সঙ্গে এ নিয়ে কথাও হয়েছে। আমি বলেছিলাম, আমার কোনো আপত্তি নেই। তোমাদের যেটি ভালো মনে হয় তা-ই করো। অবশেষে মুভিটা সম্পন্ন হয়েছে। আমি এক্সাইটেড এজন্য যে, বলিউডের কোনো একটা মুভিতে আমার একটা অংশগ্রহণ আছে। এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য অনেক সম্মানের।'