৮৩ বছর বয়সে মারা গেলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী টিনা টার্নার
৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন জনপ্রিয় মার্কিন পপ ও রক তারকা টিনা টার্নার। গতকাল (বুধবার) সুইজারল্যান্ডের জুরিখের পার্শ্ববর্তী কুইস্নাচট এলাকায় নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। খবর বিবিসির।
'কুইন অফ রক এন রোল' খ্যাত টিনা দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলর ও হৃদপিণ্ড-জনিত জটিলতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। তারকার অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রাম পেইজ থেকে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তারকার মৃত্যুর খবর জানিয়ে ঐ পোস্টে বলা হয়, "আজ আমরা একজন বন্ধুকে বিদায় জানাতে চাই যিনি সংগীতের মাধ্যমে স্মরণীয় সব কাজ রেখে গেছেন। তার সংগীত ও এর প্রতি সীমাহীন আবেগ লাখ লাখ ভক্তদের মুগ্ধ করেছে। একইসাথে পরবর্তী প্রজন্মের তারকাদের করেছে অনুপ্রাণিত।"
১৯৬০ এর দশকে তৎকালীন স্বামী ইকে টার্নারের সাথে যৌথভাবে 'প্রাউড ম্যারি', 'রিভার ডেপ' ও 'মাউন্টেন হাই' এর মতো কালজয়ী গান তৈরির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন টিনা। ১৯৭৮ সালে নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী ইকের সাথে সম্পর্কের ইটি ঘটান এ মার্কিন সংগীত তারকা।
এরপর ১৯৮০ সাল থেকে একক সংগীত শিল্পী হিসেবেও টিনা লাভ করতে থাকেন একের পর এক সফলতা। স্টেজে উদ্যমী পারফরম্যান্স ও দারাজ কণ্ঠের জন্য দর্শকের মনে তিনি খুব অল্প সময়েই জায়গা করে নিয়েছিলেন।
১৯৩৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে জন্ম টিনার। মোট আটটি গ্রামী পুরষ্কার জিতেছেন তিনি।
তার প্রকাশিত অ্যালবামগুলোর মধ্যে 'টিনা টার্নস দ্য কান্ট্রি অন' (১৯৭৪), 'রাফ' (১৯৭৮), 'প্রাইভেট ডান্সার' (১৯৮৪), 'ব্রেক এভরি রুল' (১৯৮৬), 'ফরেইন অ্যাফেয়ার' (১৯৮৯) ও 'টুয়েন্টি ফোর সেভেন' (১৯৯৯) উল্লেখযোগ্য।
২০২১ সালে টিনা একক শিল্পী হিসেবে রক এন রোলের 'হল অফ ফেম' এ জায়গা করে নিয়েছেন। যদিও এর আগেও ১৯৯১ সালে প্রাক্তন স্বামী ইকের সাথে যৌথভাবে এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন টিনা।
বিয়ন্সে, রিয়ানা, জ্যানেট জ্যাকসন, জ্যানেল মোনের মতো তরুণ সব সংগীত তারকা টিনা টার্নারের কাজের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তার মৃত্যুতে বিনোদন জগতের বহু তারকা শোক প্রকাশ করেছেন।
টিনা টার্নারের দীর্ঘ ৩০ বছরের ম্যানেজার রজার ডেভিস বলেন, "টিনা অবিশ্বাস্য মেধা ও শক্তিতে সমৃদ্ধ একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৮০ সালে টিনার সাথে প্রথম সাক্ষাতে আমি দেখেছি, ঐ সময়টাতে তিনি নিজের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছিলেন। অথচ খুব অল্প সংখ্যক মানুষই তখন তার উপর বিশ্বাস রেখেছিল। আমি টিনার অনুপস্থিতি খুব গভীরভাবে অনুভব করবো।"
১৯৬০ এর দশকে জনপ্রিয়তা পাওয়া মার্কিন গায়ক গ্লোরিয়া গ্যানোর বলেন, "কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ নির্বিশেষে টিনা বহু নারীর জন্য রক মিউজিক জগতের পথ তৈরি করে দিয়েছেন।"
অন্যদিকে গায়ক স্যার মিক জ্যাগার টিনা টার্নারকে একজন অনুপ্রেরণাদায়ী, উদার ও মজার মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন। একইসাথে এই ব্রিটিশ গায়কের তরুণ বয়সে টিনা তাকে অনেক সাহায্য করেছেন বলেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন তিনি।
এছাড়াও মডেল নাওমি ক্যাম্পবেল, অভিনেত্রী ভিওলা ডেভিস, বাস্কেটবল লিজেন্ড ম্যাজিক জনসন, সংগীত শিল্পী কেলি রওল্যান্ড ও ডেবি হ্যারি টিনার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
২০১৮ সালে টিনা টার্নারের লেখা স্মৃতিচারণমূলক 'মাই লাভ স্টোরি' বইয়ে তিনি প্রাক্তন স্বামী ইকের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, "ইকে আমার নাককে পাঞ্চিং ব্যাগের মতো ব্যবহার করতো। গান গাওয়ার সময় আমি বুঝতাম যে আমার গলা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।"
ইকের সাথে বিচ্ছেদের পর ১৯৮০ এর দশকে জার্মান মিউজিক এক্সিকিউটিভ এরউইন ব্যাকের সাথে সম্পর্কে জড়ান টিনা। দীর্ঘদিন সম্পর্কের পর ২০১৩ সালে এ যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১৭ সালে টিনার কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলে স্বামী এরইউন ব্যাক নিজের একটি কিডনি এ তারকাকে দান করেন।
ক্যারিয়ারে বহু উত্থান-পতন থাকলেও শেষ বয়সে নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন টিনা। ২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "মানুষ ভাবে, আমার জীবন অনেক কঠিনভাবে কেটেছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা খুবই চমৎকার একটা যাত্রা ছিল। বয়সের সাথে সাথে আপনি বুঝতে পারবেন, জীবনে কী হয়েছে ঘটেছে সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বরং জীবনে সবকিছু কীভাবে মোকাবেলা করেছেন সেটাই মুখ্য।"
১৯৯৩ সালে টিনা টার্নারের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছিল বায়োপিক 'হোয়াটস লাভ গট টু ডু উইথ ইট'। সিনেমাটিতে মুখ্য চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য এঞ্জেলা ব্যাসেট অস্কারের মনোনয়নও পেয়েছিলেন।
এছাড়া ২০২১ সালে এইচবিও এ সংগীত তারকাকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে।