পল ম্যাককার্টনির ক্যামেরায় ১৯৬৪'র বিটলম্যানিয়া!
রক মিউজিক, পপ মিউজিক বা ষাটের দশকে সঙ্গীতের যেকোনো ইতিহাসে ১৯৬৪ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিটলসের আগমনের কথা উল্লেখ থাকবেই। দৃশ্যগুলো খুবই পরিচিত- বোল হেয়ারকাটের কয়েকজন তরুণ (পরবর্তীতে তারা চুল লম্বা করেছিলেন), বিজনেস স্যুট পরা (যা পরে আরও জমকালো ফ্যাশনে পরিবর্তিত হয়) এবং তাদের মনমুগ্ধকর হিট গান। কিন্তু এর বাইরেও বিটলস মানেই ছিল উৎসাহে চিৎকার করতে থাকা ভক্তরা, যারা পরবর্তী কয়েক দশকেও ঠিক একই উন্মাদনা নিয়ে সমর্থন করে গেছে এই ব্যান্ডটিকে।
কিন্তু বিটলসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন, পল ম্যাককার্টনির বই '১৯৬৪: আইস অব দ্য স্টর্ম'-এ ব্যতিক্রমী যা আছে তা হলো- গায়ক নয়, বরং একজন আলোকচিত্রী হিসেবে ম্যাককার্টনির নিজের দৃষ্টিভঙ্গি।
সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসার ফাঁকে পল ম্যাককার্টনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা; আর তার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ওই সময়কার বিটলস নিয়ে উন্মাদনা।
একটি ছবিতে চোখ আটকে যাওয়ার মতো: নিউইয়র্ক সিটির প্লাজা হোটেলের সামনে ভিড়ের মধ্যে, যা বেশিরভাগই ছিল নারী; তারা পুলিশের ব্যারিকেডের পেছনে দাঁড়িয়ে সোজা ম্যাককার্টনির দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছেন এবং তাদেরই সাদাকালো একটি ছবি তুলেছেন গায়ক নিজে।
আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, ম্যাককার্টনি তার দিকে ক্যামেরা তাক করে রাখা দুজন পুরুষের ছবি তুলেছেন।
ম্যাককার্টনি বলেন, একজন অ্যাক্টিভিস্ট তাকে আর্কাইভ থেকে ছবিগুলো এনে দিয়েছেন; যেসব ছবি তিনি বিগত কয়েক দশকে একবারও দেখেননি। "বেশিরভাগ ছবির কথাই আমার মনে নেই কারণ সেটা ছিল উন্মাতাল একটা সময়", বলেন ৮০ বছর বয়সী এই গায়ক।
কিছু কিছু ছবিতে ম্যাককার্টনি তার ব্যান্ডের অন্য সদস্যদেরও এনেছেন। আরও কিছু ছবিতে ফুটে উঠেছে ১৯৬৪ সালের আমেরিকার চিত্র; বিশেষ করে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং মায়ামি তখন কেমন ছিল। মূলত এই তিনটি শহরেই বিটলস ট্যুর করে বেড়িয়েছে। বইয়ে লিভারপুল, লন্ডন এবং প্যারিসে ট্যুর করার ছবিও রয়েছে।
ম্যাককার্টনির তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, একজন রেল শ্রমিক ট্রেন চলে যেতে দেখছে, আবার এদের উপর নজর রাখা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার পোর্ট্রেটও রয়েছে।
ম্যাককার্টনি লিভারপুলে তার তরুণ বয়সের কথা স্মরণ করে বলেন, "আমি শ্রমিক শ্রেণীর অংশ হতে পেরে গর্বিত। আমার মনে হয় এটাকে আপনারা 'ব্লু কলার' (কায়িক শ্রম সম্পর্কিত) বলে থাকেন। আপনি যদি ছবিগুলো দেখেন তাহলে দেখবেন, ছবির জন্য তারা চমৎকার। এদের চেহারার পেছনেই লুকিয়ে আছে একেকটি গল্প।"
পল ম্যাককার্টনির তোলা ছবিগুলো বর্তমানে লন্ডন আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত রয়েছে। এগুলো সেই সময়কার দলিল যখন ম্যাককার্টনির বয়স ২২ বছরেরও কম এবং ওই বয়সেই তিনি অবিশ্বাস্যরকম খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছিলেন।
বিটলস-গায়ক ওই সময়টাকে আমেরিকায় তার 'খুবই বিশেষ একটা সময়' বলে অভিহিত করেন। এটা ছিল প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যার কয়েক মাস পরের এবং কংগ্রেসে ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন পাস হওয়ার কয়েক মাস আগের সময়টা। পল বলেন, "আগে যে দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ছিল, তখন তার আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছিল।"
এদিকে সময়ের সাথেসাথেই বিটলসও বদলে গিয়েছে। পুরো ষাটের দশক জুড়ে তাদের একসময়কার প্রাণবন্ত হিট গানগুলোতেও পরিবর্তন আসে, গানের মাধ্যমে নানা বার্তা দেন তারা শ্রোতাদের। কিন্তু তবুও দিনশেষে বিটলসের গান চিরন্তন রয়ে যায়। ১৯৭০ সালের মধ্যে বিশ্বখ্যাত এই ব্যান্ডে ভাঙন ধরলেও তাদের অনেক ক্যাটালগই এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়।
ছবির মাধ্যমে ম্যাককার্টনির অতীতে ফিরে যাওয়া একটা প্রশ্ন উত্থাপন করে: তিনি কি অতীতে ফিরে গিয়ে 'তরুণ ম্যাককার্টনি'কে কিছু বলতে চান?
এর উত্তরে গায়ক বলেন, "যাদের সাথে কাজ করেছি তাদেরকে জানতে চাইবো। আমি হয়তো 'তরুণ ম্যাককার্টনি'কে বলবো: দেখো, তুমি জানো, শুধুমাত্র এই সময়টা নিয়েই থেকো না বরং এই সম্পর্কগুলোকে যত্ন করতে শেখো।"
পল ম্যাককার্টনি জানান, তিনি এখনো নিয়মিত রিংগো স্টারের সাথে কথা বলেন। বিটলসের সদস্যদের মধ্যে ম্যাককার্টনির পর একমাত্র রিংগোই বেঁচে আছেন।
"ওহ, এক মিনিট! আমি বোধহয় এগুলো বানিয়ে বলছি!" বলেন পল ম্যাককার্টনি; যিনি শুরুর দিনগুলোতেও ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠই ছিলেন।