জর্জ হ্যারিসন ও এরিক ক্ল্যাপটনের 'ত্রিভুজ প্রেমের' চিঠি প্রকাশ করলেন প্যাটি বয়েড
মডেল প্যাটি বয়েড গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপটন এবং বিটলস তারকা জর্জ হ্যারিসনের সাথে তার 'ত্রিভুজ প্রেমের' খোলাসা করে এমন চিঠি নিজেই প্রকাশ করছেন। খবর বিবিসির।
বয়েড ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে উভয় তারকার কাছেই একজন প্রিয়পাত্র ছিলেন। হ্যারিসনের ক্লাসিক গান 'সামথিং' এবং ক্ল্যাপটনের হিট 'ওয়ান্ডারফুল টুনাইট' ও 'লায়লা' তাকে ভেবেই লেখা হয়েছিলো।
প্রথমদিকে বয়েড হ্যারিসনকে বিয়ে করেন। অন্যদিকে তাকে আবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্ল্যাপটন বেশ কয়েকটি আবেগপূর্ণ প্রেমের চিঠি পাঠান। এখন সে চিঠি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়সহ উভয় তারকার কাছ থেকে পাওয়া নোট নিলাম তুলতে যাচ্ছেন তিনি।
আগামী ১৫ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত জিনিসগুলো প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। একই মাসে সেগুলো লন্ডনের ক্রিস্টি'স-এ নিলামে তোলা হবে৷
১৯৬৪ সালের চলচ্চিত্র 'হার্ড ডে'স নাইট'-এ অভিনয়ের সময় বয়েড বিটলসের সাথে দেখা করেছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি হ্যারিসনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন।
নিলাম ঘর ক্রিস্টি'স ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে প্যাটি বলেন, "হ্যারিসন আমার মতো বেশ লাজুক ছিলেন। সে কারণেই হয়ত আমরা সামনে আগাতে পেরেছিলাম।"
১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে করার আগে তারা দুই বছর প্রেম করেছিলেন। সেই সময়ে বিটলসের ট্যুরের কারণে প্রায়ই হ্যারিসনকে দূরে থাকতে হতো।
বয়েড বলেন, "জর্জ যখন দূরে ছিল তখন সে খুবই আন্তরিক ছিল। সে আমাকে মিস করতো এবং আমিও তাকে ভীষণ মিস করতাম। সে আমাকে চমকপ্রদ চিঠি এবং অবাক করার মতো পোস্টকার্ড লিখতো।"
নিলামের একটি নোটে হ্যারিসন লিখেছেন, "আশা করি তুমি ঠিক আছো। আমি তোমাকে মিস করছি। আমি ক্ষুধার্ত - অনেক গ্রিলড চিজ স্যান্ডউইচ খাওয়া দরকার। আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
ক্ল্যাপটন সারেতে দম্পতির বাড়িতে প্রায়শই অতিথি হিসেবে যেতেন। কিন্তু হ্যারিসনের অজানায় বয়েডের প্রতি তার অনুভূতি ছিল।
১৯৭০ সালে ক্ল্যাপটন প্যাটিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি বলেন, "আমার জন্য তোমার হৃদয়ে কী এখনো কোনো অনুভূতি আছে? আমাদের দুজনের পরিচিত একটি বিষয়ের প্রতি আপনার অনুভূতি জানার মূল উদ্দেশ্য নিয়েই আমি তোমাকে এই চিঠিটি লিখছি"
চিঠিতে আরও বলা হয়, "তুমি কি এখনো তোমার স্বামীকে ভালোবাসো? আমি জানি এইসব প্রশ্ন খুবই অপ্রীতিকর। কিন্তু যদি এখনও তোমার মনে আমার জন্য কোনো অনুভূতি থেকে থাকে তবে তোমার অবশ্যই আমাকে জানাতে হবে! টেলিফোন করো না! একটা চিঠি পাঠাও... এটা বেশ নিরাপদ।"
বয়েড প্রথমে ভেবেছিলেন চিঠিটি একজন অনুরাগীর কাছ থেকে এসেছে। কিন্তু ক্ল্যাপটন সেদিন পরে যখন তাকে ফোন করেছিল তখন তিনি সত্যটি জানতে পারে।
কয়েক মাস পরে দ্বিতীয় একটি চিঠি লেখা হয়েছিল, যে পৃষ্ঠায় ক্ল্যাপটন জন স্টেইনবেকের উপন্যাস 'অফ মাইস অ্যান্ড মেন' এর একটি অনুলিপি ছিঁড়েছিলেন। ক্লাপ্টন বয়েডের ডাকনাম ব্যবহার করে চিঠিটি লেখা শুরু করেন এভাবে, "প্রিয় লায়লা, কেন তুমি দ্বিধা কর? আমি কি দরিদ্র প্রেমিক, আমি কি কুৎসিত, আমি কি খুব দুর্বল? বরং আমি খুব শক্তিশালী, কেন জানো?
"তুমি যদি আমাকে চাও, আমাকে নিয়ে যাও, আমি তোমার… যদি তুমি আমাকে না চাও, তাহলে অনুগ্রহ করে সেই মন্ত্রটি ভেঙ্গে দাও যা দ্বারা আমাকে আবদ্ধ করেছিলে। একটি বন্য প্রাণীকে খাঁচায় বন্দী করা পাপ, তাকে বশে রাখা ঐশ্বরিক। আমার ভালোবাসা তোমার।"
পরে তিনি বয়েডের জন্য রক স্ট্যান্ডার্ড 'লায়লা' গানটি লেখেন।
বয়েড স্মরণ করে বলেন, "গানটি খুব সুন্দর এবং বেশ জাদুকরী ছিল। আমি খুব মোহিত হয়েছিলাম। কিন্তু আমি চিন্তিত ছিলাম এই ভেবে যে, এরিক কেন এই গানটি লিখেছিল তা জর্জ খুঁজে বের করবে।"
বয়েড মূলত ক্ল্যাপটনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে তার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর সঙ্গীতশিল্পী বয়েডকে তার সফরে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।
এই সময়টায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের বিকাশ ঘটে। তখন হ্যারিসনের আশীর্রবাদেই তারা ১৯৭৯ সালে বিয়ে করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ক্ল্যাপটনের মদ্যপান এবং বিশ্বাসঘাতকতায় ১৯৮৯ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
বয়েড ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী হওয়ার আগে ১৯৬০ এর দশকে একজন বিখ্যাত ফ্যাশন মডেল ছিলেন। তিনি আগামী মাসে নানা স্মৃতি বিজড়িত চিঠি, পেইন্টিং, ফটোগ্রাফ, গহনা এবং ফ্যাশনসহ তার বহু বিখ্যাত জিনিস নিলামে তুলবেন।
লটের মধ্যে হ্যারিসনের একটি ডুডল রয়েছে। যেটি একটি আপেল গাছের নিচে বসে আঁকা হয়েছিল এবং ১৯৬৮ সালে তার জন্য একটি ক্রিসমাস কার্ড তৈরি করেছিলেন।
৮০ বছর বয়সী বয়েড দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, "আমার কাছে এগুলো এত বছর ধরে আছে। আমি ভাবলাম কেন আমি শুধু সবকিছু বিক্রি করব না এবং অন্য সবাইকে উপভোগ করতে দেব না?"
অনুবাদ: সেহরীন বিনতে রশীদ